নাঙ্গলকোটে বিধবা নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন, যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন হাসপাতালে
আঙিনা থেকে জাম্বুরা ও নারকেল পেড়ে নিয়ে যাচ্ছিল বাড়ির কিছু লোকজন, এমন দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করায় কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে এক বিধবা নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন ও গণপিটুনি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এক সপ্তাহ ধরে ওই নারী কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শয্যায় কাতরাচ্ছেন। তাঁর পুরো শরীরে এখনো নির্যাতনের চিহ্ন।
ঘটনাটি ঘটেছে নাঙ্গলকোট উপজেলার দৌলখাঁড় গ্রামে। এ ঘটনায় নাঙ্গলকোট থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। তবে ঘটনার সাত দিন হলেও গত শুক্রবার পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
নির্যাতনের শিকার ওই নারীর নাম খালেদা বেগম। তিনি দৌলখাঁড় গ্রামের প্রয়াত দুলাল মিয়ার স্ত্রী। ১৪ সেপ্টেম্বর ওই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ওই সময় বাড়িতে একাই ছিলেন তিনি। ওই নারীকে প্রথমে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে একই দিন রাতে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত জয়নাল ফরায়েজি ও তাঁর স্বজনেরা একই বাড়ির বাসিন্দা।
শুক্রবার কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই নারী সাংবাদিকদের জানান, একই বাড়ির বাসিন্দা জয়নাল ফরায়েজি ও তাঁর স্বজনেরা তাঁদের গাছের জাম্বুরা ও নারকেল পেড়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ভয়ে তাঁদের বাধা না দিয়ে এই দৃশ্য মুঠোফোনে ভিডিও করার চেষ্টা করেন তিনি। এটি তাঁরা দেখে ফেলেন। এরপর জয়নাল ফরায়েজি, তাঁর ভাই মিজান, জামাল, মেয়ের জামাই আবদুল কুদ্দুস, ভাতিজা মেহেদী হাসানসহ আরও অন্তত ১২ জন তাঁর ওপর হামলা চালান।
নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে ওই বিধবা নারী বলেন, ‘তারা প্রথমে আমাকে তাদের ঘরের সামনে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে লাঠিপেটা করে। আমি চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেননি। একপর্যায়ে তারা আমাকে পুরো উঠানে হেঁচড়াতে থাকে। এরপর একটি নারকেলগাছের সঙ্গে বাঁধেন। তারপর আমাকে এলোপাতাড়ি পেটায় তারা। একপর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরে চোখ খুলে দেখি আমি হাসপাতালে। তখন জানতে পারি, ঘটনার খবর পেয়ে কুমিল্লা শহর থেকে আমার মেয়ে ও মেয়ের সহপাঠীরা এসে পাশের কয়েকজন আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীসহ আমাকে হাসপাতালে এনেছে। প্রায় ৫ ঘণ্টা তারা আমাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখেছিল। আমার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।’
নির্যাতনের শিকার খালেদা বেগমের দাবি, স্বামী মারা যাওয়ার পর গত ১১ বছর ধরে জয়নাল তাঁকে নানাভাবে নির্যাতন এবং হয়রানি করে আসছেন। তাঁরা মূলত তাঁকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করতে চান।
অভিযুক্ত জয়নাল ফরায়েজি বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই। আমি সেখানে ছিলাম না। পরে শুনেছি বাড়িতে মহিলা মহিলা ঝগড়া ও হাতাহাতি করেছে। জাম্বুরা ও নারকেল পেড়ে নেওয়ার বিষয়টিও ভিত্তিহীন।’
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম ফজলুল হক বলেন, ঘটনার পরদিন ওই বিধবা নারীর মেয়ে বাদী হয়ে থানায় সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আসামিরা এলাকা থেকে পলাতক। আসামিদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।