বাস্তুচ্যুতদের পুর্নবাসন, ক্ষয়ক্ষতি নিরসনে স্থানীয়ভাবে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা প্রয়োজন

বরিশালে গতকাল রোববার ‘সমন্বিত স্থানীয় জলবায়ু বাস্তুচ্যুতি ব্যবস্থাপনা ও পুর্নবাসন প্রক্রিয়া শক্তিশালীকরণ’ র্শীষক সেমিনার হয়েছে। বিকেলে নগরের বান্দরোডের একটি হোটেলেছবি: প্রথম আলো

বরিশালে জলবায়ু বাস্তুচ্যুতি ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসনবিষয়ক এক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বরিশালসহ উপকূলীয় অঞ্চলে বাস্তুচ্যুতির মতো ক্ষতি বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে। বাস্তুচ্যুত মানুষের পুনর্বাসন, ক্ষয়ক্ষতি নিরসনে স্থানীয়ভাবে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা প্রয়োজন। এই উদ্যোগ নেওয়া গেলে এবং পর্যাপ্ত বরাদ্দের সংস্থান হলে মোট ক্ষয়ক্ষতির ৬০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব।

নগরের বান্দরোডের একটি হোটেল মিলনায়তনে গতকাল রোববার বিকেলে এই সেমিনার হয়। ‘সমন্বিত স্থানীয় জলবায়ু বাস্তুচ্যুতি ব্যবস্থাপনা ও পুর্নবাসন প্রক্রিয়া শক্তিশালীকরণ’ র্শীষক সেমিনারটির আয়োজন করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোস্টট্রাস্ট ও আইসিডিএ।

সেমিনারে অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন বরিশাল বিভাগীয় উপ–বন সংরক্ষক কবির হোসেন পাটোয়ারী, বরিশাল জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামীম চৌধুরী, জেলা মহিলা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মেহেরুন নাহার, আইসিডিএর প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক আনোয়ার জাহিদ, উন্নয়ন সংগঠক শুভংকর চক্রবর্তী, সবুজ আন্দোলনের আহ্বায়ক কাজী মিজানুর রহমান, বরিশাল সদর উপজেলার টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান হিরন বেগম, চড়বাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়্যারম্যান শাহ আলম। নির্বাহী পরিচালক কাজী নওশাদ রাসেল সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ ছাড়া বরিশাল সদর উপজলার টুঙ্গিবাড়িয়া ও চরবাড়িয়া অঞ্চলের অনিবন্ধিত বাস্তুচ্যুতদের একটি তালিকা সেমিনারের উপস্থাপন করা হয়।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ইতিমধ্যে বেড়ে গেছে। বদলে গেছে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ধরনও। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবও বেড়ে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে যে ক্ষতি হবে, তার আর্থিক পরিমাণ ১৪ লাখ ১৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগ ক্ষতির দিক থেকে শীর্ষে থাকবে।

বক্তারা আরও বলেন, বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জীবনযাত্রার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে এবং পড়বে। এর কারণ, অঞ্চলটি সমুদ্রপৃষ্ঠের খুব কাছাকাছি। কিন্তু এই উপকূলের স্থানীয় বাসিন্দাদের বেশির ভাগই দরিদ্র। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ অঞ্চলের আর্থিক ক্ষতি ও জীবনযাত্রার মান কমে যাওয়া—এ দুই বিপদই বেশি। এ জন্য বাস্তুচ্যুতদের মৌলিক পরিষেবা, সামাজিক সুরক্ষা ও জীবিকার বিকল্পগুলোয় প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। বরিশালের নদীপাড়ের বাঁধগুলো টেকসইভাবে নির্মাণ করা গেলে যেমন নদীভাঙন হ্রাস পাবে, তেমনি ভূমিহীন হওয়ার আশঙ্কাও কমে যাবে।
সেমিনারে বরিশাল সদরের টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়নের মান্তা সম্প্রদায়ের জুলেখা বেগম বলেন, ‘মারা গেলে আমাদের দাফন দেওয়ার মতো জায়গাও নেই। আমরা সরকারের কাছে আবেদন করছি, আমাদের স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক।’

বিভাগীয় উপ–বন সংরক্ষক কবির হোসেন পাটোয়ারী বলেন, বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি ও পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনে স্থানীয়ভাবে টেকসই পরিকল্পনা দরকার। এ জন্য সরকারি-বেসরকারি সমন্বয় প্রয়োজন। সরকার নানামুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। এ ক্ষেত্রে জলবায়ু বাস্তুচ্যুতদের টেকসই জীবিকার বিষয়টিও ভাবতে হবে। এ জন্য জনগোষ্ঠী দূরবর্তী এলাকায় অভিগমন করে, সেসব বিষয়ে জানতে হবে, গবেষণার উদ্যোগ নিতে হবে এবং সে অনুযায়ী কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।