বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের দুই সহযোগী অধ্যাপককে পুনর্বহালের দাবি শিক্ষার্থীদের
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের সদ্য বদলি করা দুই সহযোগী অধ্যাপককে পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আজ শনিবার বেলা দুইটায় বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি (বিআরইউ) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল মহানগর শাখার যুগ্ম সদস্যসচিব মাকসুদুর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘গত ১৬ জুলাইয়ে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ব্যানারে যত আন্দোলন হয়েছে, সেসব আন্দোলনে আমরা প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেছি। কিছু স্বার্থান্বেষী মহল শিক্ষার্থীদের বা সমন্বয়কদের নাম ভাঙিয়ে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান এ কে এম আকবর কবীর এবং সহযোগী অধ্যাপক ও প্যাথলজি বিভাগের প্রধান প্রবীর কুমার সাহার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে পরিকল্পিতভাবে তাঁদের বদলি করিয়েছে। এই দুই শিক্ষকের বদলি আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। আমরা আমাদের সম্মানিত দুই শিক্ষককে তাঁদের দায়িত্বে পুনর্বহাল চাই।’
মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান এ কে এম আকবর কবীর করোনা মহামারির সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বরিশাল বিভাগের একমাত্র করোনা নমুনা পরীক্ষার ল্যাবটি পরিচালনা করে বেশ প্রশংসিত হয়েছিলেন। এ নিয়ে ২০২০ সালের ২০ মে প্রথম আলোতে ‘দেশ আমাকে এই দিনটির জন্যই তৈরি করেছে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘সহযোগী অধ্যাপক ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান আকবর কবীর কলেজের ২ নম্বর হলের সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে অত্যন্ত সচেতন ছিলেন। তিনি নিয়মিত শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিতেন এবং শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধার কথা শুনে সে অনুযায়ী তা নিরসনের জন্য আন্তরিক চেষ্টা করতেন। অন্যদিকে প্যাথলজি বিভাগের প্রধান প্রবীর কুমার সাহার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তিনি কোনো অপ্রীতিকর কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে কখনো কোনো প্রমাণ মেলেনি।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মাকসুদুর রহমান আরও বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের সময় আমরা প্রতিদিন আন্দোলনে উপস্থিত ছিলাম এবং একাডেমিক বিভিন্ন গ্রুপেও সক্রিয় ছিলাম। তবে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে কোনো ভয়ভীতি প্রদর্শনের মতো ঘটনার মুখোমুখি হইনি। ক্যাম্পাসের যে বা যাঁরা শিক্ষার্থীদের মতামত উপেক্ষা করে, মিথ্যা সমন্বয়ক পরিচয় ব্যবহার করে এবং একাডেমিক কাউন্সিলের প্রতিবেদন জালিয়াতি করে মন্ত্রণালয়ে এই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন, তাঁদের চিহ্নিত করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হোক। সেই সঙ্গে এই কুচক্রী মহলের মুখোশ উন্মোচন এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর প্রমাণিত হওয়া শিক্ষকদের আগস্টেই আন্দোলনের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়েছে। কিন্তু ১৯ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়ে ভুল তথ্য দিয়ে এই দুই শিক্ষককে বদলি করানো হয়। এর মধ্যে এ কে এম আকবর কবীরকে পটুয়াখালী ও প্রবীর কুমার সাহাকে সিরাজগঞ্জ মেডিকেল কলেজে বদলি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে এমনিতেই শিক্ষক–সংকট চলছে। তার ওপরে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে এ কে এম আকবর কবীর একমাত্র সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। তাঁকে বদলি করায় কলেজের এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা চরম বিপাকে পড়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষার্থী হুমায়রা আনজুম, মুজাহিদুল ইসলাম, মিনহাজুল ইসলাম, আজগর হোসাইন, মাহমুদুল হাসান (ব্যাচ রিপ্রেজেনটেটিভ), খন্দকার নাজমুস সালেহীন (হল প্রতিনিধি), আলিফ ইসলাম (হল প্রতিনিধি) প্রমুখ।