জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, ছররা গুলিতে শিক্ষক আহত

কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার বিচারের দাবিতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার রাত সোয়া ৯টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েছবি: প্রথম আলো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে ছাত্রলীগের হামলায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ছররা গুলি ছোড়ে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ লুৎফুল এলাহী গুলিবিদ্ধ হন। তাঁর শরীর ও ডান চোখে ছররা গুলি লেগেছে।

ক্যাম্পাসে উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে রাত আড়াইটার দিকে মোহাম্মদ লুৎফুল এলাহী ছররা গুলিতে আহত হন। তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়া হয়। পরে সাভারের বেসরকারি হাসপাতাল এনাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, গতকাল সন্ধ্যায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ মিছিলে প্রথম দফায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালান। এর প্রতিবাদে আন্দোলনকারীরা রাত পৌনে নয়টার দিকে উপাচার্য নূরুল আলমের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপাচার্যসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে আন্দোলনকারীরা তাঁদের বিক্ষোভ চালিয়ে যান।

আরও পড়ুন

রাত ১২টার দিকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ও বহিরাগত সন্ত্রাসীরা মিলে আবারও হামলা করতে পারেন—এমন খবরে উপাচার্যের বাসভবন চত্বরে (সীমানাপ্রাচীরের মধ্যে) অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা উপাচার্যের বাসভবন চত্বরে আশ্রয় নেওয়ার ১০ মিনিট পর বাসভবনের সামনে বহিরাগত সন্ত্রাসীসহ শাখা ছাত্রলীগের দেড় শতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত হন। তাঁরা উপাচার্যের বাসভবনের প্রাচীরের মূল ফটকের ওপাশ থেকে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে কাচের বোতল ও ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। একপর্যায়ে হামলাকারীরা উপাচার্যের বাসভবনে প্রবেশ করে আন্দোলনকারীদের মারধর শুরু করেন। হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। তখন পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে লুৎফুল এলাহী আহত হন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মাফরুহি সাত্তার বলেন, ‘উপাচার্যের বাসার সামনের বারান্দায় অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর বাইরে থেকে পেট্রলবোমা, কাচের বোতল, ইটপাটকেল ছোড়া হচ্ছিল। তারা নিজেদের বাঁচাতে চেয়ার দিয়ে ঢাল তৈরি করেছিল। এ সময় পুলিশের ছররা গুলির আঘাতে অধ্যাপক লুৎফুল এলাহী চোখে মারাত্মক আঘাত পান। পরে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।’

এ বিষয়ে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের প্রধান মোতাহার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ওই শিক্ষকের শরীরে ও ডান চোখে ছররা গুলি লেগেছে। চোখের অবস্থা ভালো না। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।