নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুই নেতা–কর্মীকে মারধর ও এক নেতার বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল রোববার উপজেলার চাপরাশিরহাটে এ হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটে। আক্রান্ত আওয়ামী লীগ নেতারা এ জন্য স্থানীয় বিএনপিকে দায়ী করলেও দলটির সংশ্লিষ্ট নেতারা তা অস্বীকার করেছেন।
গতকাল রাত ৯টার দিকে উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া গ্রামের আবু নাছের মোল্লার বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। আবু নাছের উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক। হামলার ঘটনায় স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
এ ছাড়া গতকাল সকাল এবং দুপুরে একই উপজেলার চাপরাশিরহাট ও জনতা বাজারে মারধর করা হয়েছে বোরহান উদ্দিন (৪৫) ও মো. মেজবাহ (৪০) নামের দুই আওয়ামী লীগ কর্মীকে। বোরহান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিনের ভাই। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দুই দিন ধরে চাপরাশিরহাট বাজার ও আশপাশের এলাকায় বিকট শব্দে অনেকগুলো বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বাড়িতে হামলা হওয়া আওয়ামী লীগ নেতা আবু নাছের মোল্লা আজ সোমবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন। প্রায় পাঁচ বছর আগে দেশে ফেরেন। এরই মধ্যে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন। দল ক্ষমতায় থাকার সময় নিজে কোনো অন্যায় করেননি। কিন্তু গতকাল রাত পৌনে আটটার দিকে স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের একদল কর্মী অতর্কিতে তাঁর বাড়িতে হানা দেন।
আবু নাছেরের অভিযোগ, বিএনপির কর্মীরা তাঁর বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন। হামলাকারীরা বসতঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাঁকে খোঁজাখুঁজি করেন। ভবনের প্রতিটি কক্ষে থাকা আসবাব, টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর, জানালার কাচ, নিত্যব্যবহার্য জিনিস, ছাদে থাকা সোলার প্যানেল, পানির ট্যাংকসহ সবকিছু ভাঙচুর করেন তাঁরা। এ সময় তাঁরা বাড়ির নারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। এ ঘটনায় আবু নাছের তাৎক্ষণিকভাবে থানায় খবর দেন। কিন্তু হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।
আবু নাছেরের কলেজপড়ুয়া মেয়ে অবনি অবন্তি বলেন, বিএনপির লোকজন তাঁদের ঘরের প্রতিটি জিনিস ভাঙচুর করে শেষ করেছেন। কিছুই রক্ষা পায়নি তাঁদের হাত থেকে। তাঁরা এ সময় বাড়ির নারীদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেন। অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। এখন চরম ভীতিকর অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।
হামলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামরুল হুদা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, দুই-তিন দিন ধরে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা-কর্মী এলাকায় সংঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সন্ধ্যায় তাঁরা চাপরাশিরহাট বাজারে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। ওই সমাবেশে তাঁরা কারও বাড়িঘরে হামলা না করার বিষয়ে নেতা-কর্মীদের সতর্ক করেছেন।
কামরুল হুদা চৌধুরীর দাবি, সন্ধ্যায় সমাবেশ থেকে যাওয়ার পথে সাতবাড়িয়া এলাকায় ছাত্রদলের দুই কর্মী সাইফুল ইসলাম ও সুজনকে মারধর করে নাছের মোল্লার বাড়ির লোকজন। তাঁদের দুজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ কারণে সেখানকার উত্তেজিত বাসিন্দাদের সঙ্গে ওই বাড়ির লোকজনের ঝামেলা হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। তবে ওই ঘটনার সঙ্গে বিএনপি কিংবা সহযোগী সংগঠনের কেউ জড়িত থাকার কথা এবং বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুরের বিষয়টি তাঁর জানা নেই।
কবিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিএনপির সমাবেশ থেকে যাওয়ার পথে ছাত্রদলের দুই কর্মীকে মারধরের জের ধরে বিএনপির ও এলাকার লোকজন আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে হামলা চালিয়ে কিছুটা ক্ষয়ক্ষতি করেছে। ভুক্তভোগী পরিবারকে থানা লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ দিলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।