নিরাপত্তাপ্রহরী মনির হত্যায় শামীম ওসমানসহ ১২৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিরাপত্তাপ্রহরী মনির হোসেন (৫৬) নিহত হওয়ার ঘটনায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ দলীয় সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, তাঁর ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমানসহ ১২৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে নিহত মনির হোসেনের ছোট ভাই সাখাওয়াত হোসেন বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলাটি করেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আমীর খসরু বিষয়টি নিশ্চিত করেন। অন্য আসামিরা হলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ নিজাম, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান প্রমুখ।
বাদী সাখাওয়াত হোসেন এজাহারে উল্লেখ করেন, তাঁর বড় ভাই মনির হোসেন সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদি নতুন মহল্লা এলাকায় পিএম টাওয়ারে নিরাপত্তাপ্রহরীর চাকরি করতেন। গত ২০ জুলাই বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে পণ্ড করতে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা পিস্তল, শটগান, ককটেল, লাঠিসোঁটাসহ নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করেন। এ সময় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি মজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ইয়াসমিন মিয়ার নির্দেশে এজাহারভুক্ত অন্য আসামিরা ছাত্র-জনতার উদ্দেশে এলোপাতাড়ি গুলি করেন। সেই সঙ্গে আসামিরা রাস্তায় অবস্থানরত ছাত্র-জনতার ওপর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভীতির সৃষ্টি করেন এবং তাঁদের হাতে থাকা দেশি অস্ত্র দিয়ে হামলা ও মারধর করেন। এ সময় হিরাঝিল রোডে সাবেক কাউন্সিলর ওমর ফারুকের চুনের ফ্যাক্টরির সামনে নিরাপত্তাপ্রহরী মনির হোসেন (৫৬) গুলিবিদ্ধ হন। তাঁকে উদ্ধার করে ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ২১ জুলাই রাতে চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁকে পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২২ জুলাই বিকেলে তিনি মারা যান।
শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর এ নিয়ে শামীম ওসমানসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা হলো। এর আগে ৫ আগস্ট সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে মাছ ব্যবসায়ী মিলন (৩৮) গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার ঘটনায় তাঁর স্ত্রী শাহনাজ বেগম বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ১৮ আগস্ট হত্যা মামলা করেন। ৫ আগস্ট দুপুরে শহরের মিশনপাড়া এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আবু হাসান স্বজন (২০) নিহত হওয়ার ঘটনায় ১৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় এবং সোনারগাঁয়ের কাঁচপুরে নাফ পরিবহনের বাসচালকের সহকারী জনি (১৭) নিহত হওয়ার ঘটনায় তাঁর বাবা ইয়াসিন মিয়া ২০ আগস্ট সোনারগাঁ থানায় হত্যা মামলা করেন।
এই মামলাগুলোতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সদ্য সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়েছে।