জেলেদের জন্য বরাদ্দ ১০০ বস্তা চাল ইউপি সদস্যের আত্মীয়ের বাড়ি থেকে জব্দ
বরগুনার বেতাগী উপজেলায় এক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্যের কাছে জেলেদের জন্য বরাদ্দ হওয়া সরকারি ভিজিএফের ১০০ বস্তা চাল অন্য ব্যক্তির বাড়ি থেকে জব্দ করেছে উপজেলা প্রশাসন। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কবির হাওলাদার নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এই চাল উদ্ধার করা হয়।
এই চালগুলো বিতরণের দায়িত্ব ছিল পার্শ্ববর্তী মোকামিয়া ইউপির সদস্য ফারুক হোসেনের। তিনি দাবি করেছেন, কবির হাওলাদার তাঁর ভাই। যদিও স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, তাঁরা দূরসম্পর্কের আত্মীয়।
চাল উদ্ধারের অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন বেতাগী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সমাপ্তি সাহা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মোকামিয়া ইউনিয়নের জেলেদের জন্য বরাদ্দ হওয়া ভিজিএফের চাল পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের একটি ঘরে মজুত রাখা হয়েছে, এমন খবর পেয়ে গতকাল রাতে সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কবির হাওলাদারের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেখান থেকে ভিজিএফের সরকারি ১০০ বস্তা চাল জব্দ করা হয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বেতাগী উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জাটকা ধরা বন্ধে সরকার দেশের উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীতে ছোট ফাঁসের জাল দিয়ে মাছ ধরার ওপর ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এ সময়ে আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সরকারি খাদ্যসহায়তা হিসেবে প্রতি মাসে প্রত্যেক জেলেকে ৪০ কেজি ভিজিএফের চাল দেওয়া হয়। বেতাগী উপজেলার মোকামিয়া ইউনিয়নের জেলেদের জন্যও এই চাল দেওয়া হয়। এসব চালের একটি অংশই পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে জব্দ করা হয়েছে। চালের বস্তাগুলো বেতাগী উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে রাখা হয়েছে।
মোকামিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ফারুক হোসেন বলেন, ‘চেয়ারম্যানের নির্দেশে এই চাল আমি আমার ভাইয়ের বাড়িতে রেখেছি। এখনো কিন্তু আমাদের সব চাল বিতরণ করা হয়নি।’
মোকামিয়া ইউপির চেয়ারম্যান গাজী জালাল আহমেদ ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি বলেন, ‘ওই চাল ইউনিয়ন পরিষদে রাখতে গেলে অতিরিক্ত পরিবহন খরচ লাগত। জনগণের কথা বিবেচনা করে এই চাল এখানে রাখা হয়েছে। সবার সুযোগ-সুবিধার কথা বিবেচনা করে আমি চেয়ারম্যান হিসেবে এই চাল এখানে রাখতে বলেছি। এতে যদি আমার নামে মামলা হয়, হোক।’ কোনো ব্যক্তির বাড়িতে সরকারি চাল রাখা যায় কি না প্রশ্ন করলে তিনি কোনো জবাব দেননি।
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সরকারি চাল উদ্ধারে মৎস্য কর্মকর্তাকে পাঠান তিনি। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি চাল ব্যক্তিমালিকানাধীন বাড়িতে রাখা বেআইনি বলে জানান তিনি।