গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে বাড়ছে আগ্রহ
দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার নশরতপুর গ্রামের কৃষক গণেশ চন্দ্র রায় (৫২) এবার গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করেছেন ২০ শতক জমিতে। জমি প্রস্তুত থেকে পেঁয়াজ উত্তোলন পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। গত কয়েক দিনে পেঁয়াজের বাজার চাঙা হওয়ায় ৬ মণ পেঁয়াজ বিক্রি করে দাম পেয়েছেন ২৬ হাজার ৪০০ টাকা। তাঁর এই সফলতা দেখে শীতকালীন পেঁয়াজ চাষে এলাকার অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ইতিমধ্যে চারা লাগানোর কাজ শেষ করেছেন কেউ কেউ।
গণেশ চন্দ্র রায় জানান, সবকিছু ঠিক থাকলে ২০ শতক জমিতে প্রায় ১৮-২০ মণ পেঁয়াজ পাবেন। এই বাজার যদি অব্যাহত থাকে আরও ৪৫ হাজার টাকার পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারবেন। সে হিসাবে ২০ শতক জমির পেঁয়াজ বিক্রি করে লাভ পাবেন ৫৬ হাজার ৪০০ টাকা।
গণেশ চন্দ্র রায় আরও বলেন, ‘গেলবার ৫ শতক মাটিত পেঁয়াজ লাগাইছিনু। সেইবার ভালো করি দেখাশোনা করির পার নাই। তেমন লাভ করির পারো নাই। এইবার কৃষি অফিস থাকি সার-বীজ পায়া ২০ শতক মাটিত পেঁয়াজ লাগাইছু। এইবার আবাদ ভালোই হইছে। কয়েক দিন আগোত দাম বাড়ি গেইলে তখন থাকি খেতের পাশোত ডেরা দিয়া (ছাউনি) রাইতভর পাহারা দেছো।’
গত বুধবার চিরিরবন্দর উপজেলার নশরতপুর, আউলিয়াপুর, কারেন্টহাট এলাকা ঘুরে ও বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, এবার গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। ভূষিরবন্দর এলাকার কৃষক নিশিকান্ত রায় বলেন, কৃষি কার্যালয় থেকে বীজ পেয়েছিলেন অক্টোবর মাসে। এক বিঘা মাটি প্রস্তুত করেছিলেন। বৃষ্টি বেশি থাকায় চারার কিছু ক্ষতি হয়েছে। পরে ১০ শতক জমিতে চারা লাগিয়েছেন। এখনো খেত থেকে পেঁয়াজ তোলেননি। আশা করছেন ৮-১০ মণ পেঁয়াজ পাবেন।
নিশিকান্ত আরও বলেন, পেঁয়াজ চাষে পরিশ্রম বেশি। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজে রোদ-বৃষ্টি দুটোই দরকার। তবে নিয়ম করে যত্ন নিলে আরও ভালো ফল পাওয়া যাবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জেলায় ২৭০ হেক্টর জমিতে দুই হাজার ৫০০ জন কৃষককে প্রণোদনার আওতায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে চিরিরবন্দর উপজেলায় পেঁয়াজ চাষ হয়েছে প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে। কৃষকদের প্রত্যেককে এক কেজি নাসিক এন-৫৩ জাতের পেঁয়াজের বীজ, ২০ কেজি ডিএপি, ১০ কেজি এমওপি সার, নগদ অর্থসহ অন্য সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে। এ ছাড়া শীত মৌসুমে এবার জেলায় আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত ৭৫০ হেক্টর জমিতে চারা রোপণ হয়েছে।
উপজেলার রানীরবন্দর এলাকার কৃষক দুলাল হোসেন বলেন, ‘গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজটা লাগাতে পারি নাই। প্রায় দেড় বিঘা মাটিতে শীতকালীন পেঁয়াজ লাগানোর প্রস্তুতি নিয়েছি। বাজারে দাম দেখে অনেকেই এবারে পেঁয়াজের জন্য জমি করতেছে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে মূলত রবি মৌসমেই পেঁয়াজের আবাদ হয়। তবে সম্প্রতি গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদও বৃদ্ধি পাচ্ছে। পেঁয়াজ চাষে উপযোগী মাটি বেলে দোআঁশ। সরাসরি জমিতে বীজ বুনে, কন্দ ও চারা রোপণ করে পেঁয়াজ উৎপাদন করা যায়। আবার বীজতলায় বীজ বুনে সেই চারা তুলে রোপণ করা যায়। গ্রীষ্মকালে জুলাই থেকে অক্টোবর এবং শীতকালে নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে পেঁয়াজ রোপণ করা হয়। গ্রীষ্মকালীন জাতগুলোর জন্য বীজ বপন থেকে ফসল উত্তোলন পর্যন্ত ৯৫-১১০ দিন এবং শীতকালীন পেঁয়াজের জন্য ১৩০-১৪০ দিন সময় লাগে।
চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জোহরা সুলতানা বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষি প্রণোদনার অংশ হিসেবে ১৫০ জন কৃষককে সার-বীজ-নগদ টাকা সরবরাহ করা হয়েছিল। যে বীজ দেওয়া হয়েছিল সঠিক যত্ন নিলে হেক্টরপ্রতি ফলন আসবে ১৭ মেট্রিক টন করে। এ অঞ্চলের মাটি পেঁয়াজ চাষের জন্য উপযোগী। কৃষকেরা সাধারণত শীতকালীন পেঁয়াজ চাষে অভ্যস্ত। তবে গত দুই বছর থেকে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে সফলতা পেয়ে তাঁদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। তবে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে অধিক যত্ন নিতে হয়।