জুলাই বিপ্লবের চিত্র ফুটে উঠল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘আলোকচিত্রে জুলাই বিপ্লব-২৪’ প্রদর্শনীতে এসেছেন নগরের নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ। সোমবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বরে
ছবি: প্রথম আলো

‘প্রতিটি ছবি হাজারবার দেখা, তবু প্রতিবার নতুন করে গায়ে কাঁটা দেয়, চোখে পানি আসে।’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘আলোকচিত্রে জুলাই বিপ্লব-২৪’ প্রদর্শনীতে আসা একজন দর্শনার্থী এ মন্তব্য করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বরে তিন দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীর আজ সোমবার চলছে শেষ দিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ নগরের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রদর্শনীতে ভিড় করছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহযোগিতায় চব্বিশের জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে এ আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রদর্শনীতে অন্তত ২০০টি আলোকচিত্র স্থান পেয়েছে। পাশাপাশি প্রদর্শনীতে জুলাই বিপ্লবের প্রামাণ্যচিত্রও দেখানো হচ্ছে। প্রদর্শনীটি সবার জন্য উন্মুক্ত। গত শনিবার এ প্রদর্শনী শুরু হয়।

দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের হত্যার প্রতিবাদে ১ আগস্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মৌন মিছিলের আয়োজন করেছিল শিক্ষক নেটওয়ার্ক। ওই কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ করতে বাধা দেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সাদাপোশাকে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তাঁরা। শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের ছাড়াতে গেলে তাঁদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় এক শিক্ষার্থীকে চ্যাংদোলা করে তুলে নেওয়ার ছবি সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। আয়োজকেরা ‘নিপীড়ক ও নিপীড়িত’ নাম দিয়ে ওই ছবি প্রদর্শনীতে রেখেছেন। দর্শনার্থীরাও ছবিটি পছন্দ করছেন।

এ ছাড়া প্রদর্শনীতে ‘মৃত্যুর ওপারেই বিজয়’, ‘প্রতিবাদে প্রতিরোধে অগ্নিসন্তানেরা’, ‘ঐতিহাসিক ১৬ জুলাই’, ‘বিজয় উল্লাস’, ‘বিশ্বজিতের কণ্ঠস্বর’, ‘গণজোয়ার’, ‘সংখ্যায় বেশি হলেও ভয় তাদেরই বেশি’, ‘ঠিক সন্ধ্যা নামার আগে হায়েনাদের হানা’, ‘নেকড়ের সন্ত্রাস’, ‘শেষরাতের দাদাগিরি’, ‘এক চুমুক কোক ও শিঙাড়ার শেষ সমাবেশ’, ‘জুলাই বিপ্লবে বাংলাদেশে প্রথম ছাত্রলীগের পালানোর দৃশ্য’ শিরোনামে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের নানা চিত্র ফুটিয়ে তোলা ছবিগুলোতে। দর্শনার্থীরা দল বেঁধে এসে প্রদর্শনীটি উপভোগ করছেন। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের নানা কর্মসূচি দিয়ে তৈরি ফটোফ্রেমে দর্শনার্থীদের অনেকেই ছবি তুলছেন। বিজয়ের মাসে এই আয়োজন বিজয়ের সর্বজনের প্রতীক হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

প্রদর্শনী শেষে দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে মন্তব্যের সুযোগ। একটি টেবিলের ওপর রাখা সাদা কাপড়ে দর্শনার্থীরা মন্তব্য লিখছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রুবেল লিখেছেন, ‘অসম্ভব ভালো আয়োজন। এগুলো আরও করা উচিত। এতে চেতনা জাগ্রত থাকবে।’

গত শনিবার রাতে প্রদর্শনীটি ঘুরে দেখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন। তিনি লিখেছেন, ‘এলাম, দেখলাম, মুগ্ধ হলাম। ’২৪-এর বিপ্লবের চেতনা যুগ যুগ ধরে জীবিত থাকুক।’

আয়োজনের ব্যাপারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, ‘জুলাই বিপ্লব নিয়ে যত কাজ হবে, এর স্মৃতিগুলো ঠিক ততটাই আমাদের মানসপটে ভেসে উঠবে। জুলাই আমাদের অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ করেছিল। কিন্তু বর্তমানে সেই ঐক্যে কিছুটা ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। এমন আয়োজনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রগঠনের কাজে আমরা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সাহস পাব।’