রাঙামাটির দ্বীপে রিসোর্ট, নীল জলে হাউস বোট

রাঙামাটিতে কাপ্তাই হ্রদে এমন হাউসবোটে ভ্রমণ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। হ্রদের বার্গী লেকভ্যালি রিসোর্ট এলাকায়ছবি: সুপ্রিয় চাকমা

নীল জলে ঘেরা কাপ্তাই হ্রদের মাঝে মাথা তুলে আছে বড় বড় গাছে ঘেরা ছায়া সুনিবিড় সবুজ পাহাড়। দ্বীপে প্রবেশ করতেই দেখা মিলবে ছোট–বড় নানা আকারের কটেজ। কটেজের সামনে সুইমিংপুল আর হ্রদের বুকে কায়কিংয়ে মেতে উঠতে দেখা যায় পর্যটকদের।

রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ ঘিরে এমন অনেক রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। এসব রিসোর্টে তারকা মানের হোটেলের মতোই আরামদায়ক কক্ষ, নানা স্বাদের খাবারদাবার আর বিনোদনের নানা উপকরণ থাকায় পর্যটকেরাও ছুটে আসছেন। এ ছাড়া হ্রদের বুকে ভাসমান হাউস বোটেও রাতযাপনের সুবিধা রয়েছে। সব মিলিয়ে কাপ্তাই হ্রদকে কেন্দ্র করে বদলে যাচ্ছে রাঙামাটির পর্যটন শিল্প।

পর্যটনসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০২ সালে রাঙামাটি শহরের কাছেই কাপ্তাই হ্রদের বুকে পেদা টিংটিং নামের রেস্তোরাঁ ও রিসোর্ট চালু হয়। এটিই ছিল জেলার প্রথম জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ ও রিসোর্ট। এরপর বিভিন্ন সময়ে কাপ্তাই হ্রদে এমন রিসোর্টে গড়ে উঠতে থাকে। পর্যটকেরাও আসতে থাকেন। গত ৫ বছরে কাপ্তাই হ্রদের পাড়ে ও হ্রদের বিভিন্ন দ্বীপে ১০ থেকে ১২টি রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। বাড়ছে আধুনিক হাউস বোটের সংখ্যাও।

এখানকারই এক পর্যটন ব্যবসায়ী নীলাঞ্জনা রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী দীপাঞ্জন চাকমা বলেন, স্থানীয় উদ্যোক্তারা কাপ্তাই হ্রদকেন্দ্রিক পর্যটনে অনেক বিনিয়োগ করছেন। গত কয়েক বছরে পর্যটনের সুযোগ-সুবিধা অনেক বেড়েছে। পর্যটকদের টানতে বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলোকে কাজে লাগানো হচ্ছে।

চলতি বছরে এপ্রিল মাসে শুরু হয় রাঙা দ্বীপ রিসোর্টের যাত্রা। এরই মধ্যে পর্যটকদের কাছে নজর কেড়েছে এই রিসোর্ট। শহরের উত্তরের দিকে কাপ্তাই হ্রদের একটি দ্বীপে নির্মাণ করা হয় এই রিসোর্ট। যাতযাপনে আধুনিক কটেজ, হোটেল, সুইমিংপুল, কায়াকসহ পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে যা কিছু প্রয়োজন, তার সবই রয়েছে এখানে। এ ছাড়া গত বছর হিল ভিউ ও জুমকিং রিসোর্ট, ২০২১ সালে নীলাঞ্জনা রিসোর্ট ও টং ইকো, ২০২০ সালে বার্গী লেকভ্যালি ও গাং পাড়, এবং ২০১৯ সালে চালু হয় বাগান বিলাস রিসোর্ট। আরও চারটি রিসোর্টের নির্মাণকাজ চলছে।

কাপ্তাই হ্রদের ছোট ছোট দ্বীপে গড়ে উঠেছে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সংবলিত রিসোর্ট। রাঙাদ্বীপ রিসোর্টে
ছবি: সুপ্রিয় চাকমা

রিসোর্টের পাশাপাশি ২০টির বেশি রেস্তোরাঁ ও থিম পার্ক গড়ে উঠেছে জেলা শহরে। তার মধ্যে অন্যতম পলওয়েল পার্ক, ডিভাইন লেক, আরণ্যক ও বড়গাং। হ্রদে ভ্রমণের জন্য গত কয়েক বছরের ব্যবধানে অন্তত ১২টি হাউস বোট চালু হয়েছে। এসব বোটে থাকা ও খাওয়ার সুবিধা রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সত্তরের দশকে রাঙামাটি জেলাকে পর্যটন এলাকা ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৪ সালে শহরের দক্ষিণে কাপ্তাই হ্রদের দুই দ্বীপের মাঝখানে রাঙামাটি ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ করা হয়। তবে এরপর পর্যটকদের আকর্ষণ করতে তেমন কিছুই করা হয়নি। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি হওয়ার পর রাঙামাটিতে পর্যটন বাড়তে থাকে।
পর্যটনশিল্পে বিনিয়োগে এগিয়ে আসছেন স্থানীয় তরুণ উদ্যোক্তারাও। তাঁরই একজন ফজলে এলাহী। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমরা বন্ধুরা মিলে মায়াবী নামে কাপ্তাই হ্রদের দ্বীপে একটি রিসোর্ট নির্মাণ করছি। কিছুদিনের মধ্যে উদ্বোধন করা হবে। আমাদের মায়াবী রিসোর্টের এলাকায় আরও ছয়টি নির্মাণকাজ চলছে।’

জেলা পরিষদের সদস্য মেউচিং মারমা বলেন, রাঙামাটিতে পাহাড় ও কাপ্তাই হ্রদ নিয়ে পর্যটনে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু নানা কারণে তা এখনো হয়ে ওঠেনি। তবে গত কয়েক বছর স্থানীয় উদ্যোক্তারা পর্যটনে বেশ উন্নয়ন করেছে। এসব কারণে আগের তুলনায় কিছুটা পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। তবে সরকারিভাবে তেমন উন্নয়ন হয়নি বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, পর্যটন মন্ত্রণালয় ও জেলা পরিষদ যৌথ উদ্যোগে রাঙামাটিতে পর্যটন খাতকে এগিয়ে নিতে মহাপরিকল্পনা হচ্ছে। ইতিমধ্যে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।