মাগুরায় হামলায় আহত ছাত্রদল নেতার মৃত্যু, আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
মাগুরায় হামলায় আহত ছাত্রদলের এক নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বুধবার সকালে ঢাকায় মারা গেছেন। গত সোমবার প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হওয়ার পর তাঁকে ঢাকার একটি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল।
নিহত ওই যুবকের নাম আবু তৈয়ব মোল্যা (২৫)। তিনি মহম্মদপুর উপজেলার নাওভাঙা গ্রামের মো. আবুল কালাম আজাদ মোল্যার ছেলে এবং রাজাপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ছিলেন।
হামলার জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের দায়ী করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে নৃশংসভাবে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন ইউনিয়ন ছাত্রদলের ওই নেতাকে।
রুহুল কবির রিজভীর ওই অভিযোগ অসত্য দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে মাগুরা শহরের জামরুলতলায় দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাগুরা-১ (শ্রীপুর-সদর একাংশ) আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর, মাগুরা-২ (মহম্মদপুর-শালিখা-সদর একাংশ) আসনের সংসদ সদস্য বীরেন শিকদার, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ফ ম আবদুল ফাত্তাহ, সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কুমার কুণ্ডু প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের নেতারা ছাত্রদলের নেতার মৃত্যুতে সমবেদনা প্রকাশ করেন এবং এ ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন। আওয়ামী লীগের নেতারা পাল্টা অভিযোগ করেন, ওই ছাত্রদল নেতা গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন, এমন একটা ছবি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মো. রাজা মিয়াসহ কয়েকজন ফেসবুকে শেয়ার করেন। সেখানে আবু তৈয়ব মোল্যা নামের ওই যুবকের ছাত্রদলের পদ নিয়েও কটাক্ষ করা হয়। এ নিয়ে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দল ও কৃষক দলের কয়েকজনের হামলায় ওই যুবক গুরুতর আহত ও পরে হাসপাতালে মারা যান।
মহম্মদপুর থানা সূত্রে জানা গেছে, হামলার ঘটনায় গতকাল রাতে একটি মামলা করেছেন নিহত তৈয়বের বাবা মো. আবুল কালাম আজাদ। সেখানে নাওভাঙা গ্রামের জিবলু বিশ্বাস, জাহাঙ্গীর বিশ্বাস, পাশের রাড়িখালী গ্রামের আবদুস সালাম সরদারসহ ১৫ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে ১ নম্বর আসামি জিবলু বিশ্বাস স্থানীয় কৃষক দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে। ২ নম্বর আসামি জাহাঙ্গীর বিশ্বাস স্থানীয় সামাজিক দলের একটি অংশের মাতবর। তিনিও বিএনপির রাজনীতি করেন বলে জানা গেছে। বাদীর অভিযোগ, আসামিদের সঙ্গে আগে থেকেই আধিপত্য নিয়ে তাঁদের বিরোধ চলছিল। এরই অংশ হিসেবে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুস সালাম সরদারের নেতৃত্বে হামলা করা হয়।
অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আবদুস সালাম সরদার। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি রাড়িখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন মামলার বাদী মো. আবুল কালাম আজাদ। এমপিও জালিয়াতিসহ বেশ কিছু অভিযোগে তাঁকে ১১ মাস আগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ জন্য আমাকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। মূলত স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের বিরোধেই এ ঘটনা ঘটেছে।’
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নাওভাঙা গ্রামের বাসিন্দারা দুটি গ্রাম্য দলে বিভক্ত। যার একটি অংশের মাতবর মো. নজরুল ইসলাম। অন্য পক্ষের নেতৃত্ব দেন মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। ঘটনার দিন নজরুল ইসলামের দলের আবু তৈয়ব মোল্যা তাঁকে নিয়ে ফেসবুকের ওই পোস্ট মুছে ফেলতে অন্য পক্ষের মাতবর মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছে যান। সেখান থেকে ফেরার পথেই হামলার শিকার হন ছাত্রদলের ওই নেতা ও তাঁর ভাই তামিম হোসেন (১৬)। স্থানীয় লোকজন বলছেন, দুটি দলেই বিএনপি ও আওয়ামী লীগের লোকজন আছেন।
জানতে চাইলে মহম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বোরহান উল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আহত ওই যুবক ঢাকায় মারা গেছেন। এর আগে তাঁর বাবা হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার একটি মামলা করেছেন। ওই মামলায় দুজনকে গতকাল গ্রেপ্তার করা হয়। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে।