পঞ্চগড়ে আহমদিয়াদের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর পরিদর্শনে সারা হোসেনসহ মানবাধিকারকর্মীরা
পঞ্চগড়ে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) বাড়িঘর ও স্থাপনা পরিদর্শন করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক আইনজীবী সারা হোসেন।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে পঞ্চগড় জেলা শহরের উপকণ্ঠে আহম্মদনগর এলাকায় এই প্রতিনিধিদল আসে। তারা আগুনে পুড়ে যাওয়া আহমদিয়াদের বাড়িঘর, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা ঘুরে দেখে। এ ছাড়া তারা আহমদিয়াদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘জামেয়া আহমদিয়া বাংলাদেশে’ আশ্রয় নেওয়া নারীদের সঙ্গে কথা বলে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পঞ্চগড় জেলা শহরের উপকণ্ঠে আহম্মদনগর ও শালশিরি এলাকায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে একদল দুর্বৃত্ত। অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মোট ১১৭টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় তাদের প্রায় ৪০০ নারী-পুরুষ আহমদিয়াদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামেয়া আহমদিয়া বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলা শেষে সারা হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত ১৬ জুলাই থেকে দেশে যেসব ঘটনা ঘটেছে, ছাত্র ও আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ হয়েছে, এমনকি ৫ আগস্টের পরও অনেকের ওপর আক্রমণ হয়েছে, এই পুরো সহিংসতার ঘটনায় যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ানো, সংহতি জানানো এবং তথ্য অনুসন্ধানের জন্য আমরা এসেছি। আমরা খোঁজ নিচ্ছি কার কী ক্ষতি হয়েছে এবং আমরা নিজেরাও চেষ্টা করব বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন থেকে তাঁদের সহযোগিতা করতে। এ ছাড়া আমরা অবশ্যই সরকারকে জানাতে চাইছি, কী পরিস্থিতি পাচ্ছি আমরা বিভিন্ন জায়গায়। সরকারের কাছে আমরা একটা আবেদন বা দাবিনামা দিতে চাইছি যে যাঁরা এভাবে ৫ তারিখের আগে ও পরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের জন্য সুরক্ষার ব্যবস্থা, নিরাপত্তার ব্যবস্থা, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। সেই সঙ্গে হামলাকারীদের বিচারের ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি। বিশেষ করে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁরা এখনো আতঙ্কে আছেন। আমরা তাঁদের আতঙ্ক কাটানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপ নিতে সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।’
সারা হোসেন বলেন, ‘শুধু আহমদিয়ারা নন, আমরা যাঁরা বাংলাদেশে বসবাস করি, আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। আমাদের সবারই মৌলিক অধিকার আছে, নাগরিক অধিকার আছে। সমস্যা হচ্ছে, একটি বিশেষ দল আছে, যাদের পরিকল্পনাই আছে আহমদিয়াদের বিরুদ্ধে লাগা, তাদের ভয়ভীতি দেখানো এবং তারা যাতে তাদের নাগরিক অধিকার না পায়, এটার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া খুবই জরুরি দরকার। এটার জন্য আমরা মানবাধিকারকর্মীরা অনেকেই বলেছি। কিন্তু আগের সরকার হোক আর এই সরকার হোক, আমরা যথেষ্ট ব্যবস্থা কখনোই দেখছি না।’
সারা হোসেন আরও বলেন, ‘এখন যে পরিস্থিতি আমরা দেখছি, তা সত্যিই ভয়াবহ। ১০০টির বেশি পরিবার ঘরহারা অবস্থায় এখানে আশ্রয় নিয়েছে। এই ব্যাপারগুলো জরুরি ভিত্তিতে এখন সরকারের দেখা দরকার। আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর কিন্তু আমরা বারবার হামলা হতে দেখেছি। আমাদের দেশে একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, যারা ভিন্নমতের, তাদের ওপর চড়াও হওয়া। তাদের আক্রমণ করা। এই সংস্কৃতি আমাদের শেষ করে দিতে হবে। যদি নতুন বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাই এবং বৈষম্যবিরোধী একটা পরিস্থিতি আমরা তৈরি করতে চাই, তাহলে সবারই তো নিজেদের মতপ্রকাশের সুযোগ থাকতে হবে। তা যেকোনো ধর্মের হোক আর যেকোনো মতের হোক। সেই পরিবেশটা তৈরি করতে শুধু সরকার নয়, আমাদের সবারই কাজ করতে হবে। আর যারা এ ধরনের ঘৃণ্য কাজগুলো করে, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিয়ে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।’
সাত সদস্যের প্রতিনিধিদলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, নারীপক্ষের সদস্য কামরুন্নাহার, আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা প্রমুখ।