গোয়ালন্দে চরাঞ্চলে রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক, দেড় মাসে তিনজনের মৃত্যু

গোয়ালন্দে চরাঞ্চলে বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপের উপদ্রব বেড়েছে। আতঙ্কে অনেক কৃষক মাঠ থেকে শষ্য তুলতে ভয় পাচ্ছেন। সম্প্রতি তোলাছবি: প্রথম আলো

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চলে বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপের উপদ্রব বেড়েছে। স্থানীয়ভাবে চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া নামে পরিচিত এ সাপের কামড়ে গত দেড় মাসে অন্তত তিনজন কৃষকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতিতে কৃষকেরা খেত থেকে ফসল তুলতে ভয় পাচ্ছেন।

আজ বৃহস্পতিবার উপজেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় চরাঞ্চলে রাসেলস ভাইপারের আতঙ্কের বিষয়টি উঠে আসে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্রের সভাপতিত্বে সভায় বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি ও অংশীজনেরা অংশ নেন।

সভায় উজানচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন মৃধা বলেন, কৃষকেরা মাঠে কাজ করতে গিয়ে রাসেলস ভাইপার সাপের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। ইতিমধ্যে তিনজন কৃষক মারা গেছেন। এখন ভয়ে কেউ শস্যখেতে যেতে পারছেন না। এ কারণে মাঠে এখনো ধান ও ভুট্টা পড়ে আছে। এ নিয়ে কৃষকদের করণীয় জানতে চান তিনি।

জবাবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকন উজ্জামান কৃষকদের ধান কাটার সময় আগে লাঠি দিয়ে ধানগাছ নড়াচড়া করে নিশ্চিত হয়ে সতর্কতার সঙ্গে ধান কাটার পরামর্শ দেন। একইভাবে বিশেষ ধরনের জুতা পরে কাজ করার পরামর্শ দেন।

ইউএনও জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাসেলস ভাইপারের মতো বিষধর সাপের উপদ্রব বাড়ায় তাঁরা চিন্তিত। উপজেলা পরিষদ থেকে চরাঞ্চলের ১০০ জন কৃষককে বিশেষ ধরনের গামবুট জুতা দেওয়া হবে। প্রয়োজনে শ্রমিকদের মধ্যেও বিতরণ করা হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উজানচর ইউনিয়নের চর মজলিশপুর, মহিদাপুর, দেবীপুর; দৌলতদিয়া ইউনিয়নের চর করনেশনা, আংকের শেখের পাড়াসহ চরাঞ্চলে সাপের উপদ্রব দেখা দেখা দিয়েছে।

গোয়ালন্দে চরাঞ্চলে বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপের উপদ্রপ বেড়েছে। আজ বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি আলোচিত হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

মজলিশপুর এলাকার মাতুব্বর আজিজুল মোল্যা জানান, গত সোমবার দুপুরে মাঠে কাজ করার সময় কৃষক শামীম শেখসহ কয়েকজন পদ্মা নদী থেকে একটি নৌকা টেনে তীরে তুলছিলেন। নৌকার নিচে থাকা রাসেলস ভাইপার সাপ শামীমের পায়ে কামড় দেয়। লোকজন সাপটি মেরে তাঁকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরদিন বিকেলে শামীম মারা যান। এরপর বুধবার ধান কাটার সময় কৃষকেরা আরেকটি রাসেলস ভাইপার মারেন। তিনি বলেন, এখন ভয়ে কেউ মাঠে নামতে চাচ্ছেন না। কাজের জন্য শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে না।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, গত ৮ এপ্রিল চর মজলিশপুর এলাকায় খেত থেকে ভুট্টা তোলার সময় সাঈদুল শেখ নামের এক কৃষককে সাপে কামড় দেয়। প্রথমে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক সপ্তাহ পর তিনি মারা যান। তার আগে ২৯ মার্চ চর দেবীপুর মাঠে ময়না বেগম নামের এক কিষানিকে সাপে কামড়ায়। চিকিৎসা নেওয়ার প্রায় দুই সপ্তাহ পর নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান।

দৌলতদিয়ার চর করনেশনা এলাকার কৃষক টুটুল শেখ প্রথম আলোকে বলেন, চরাঞ্চলজুড়ে রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক বিরাজ করছে। মাঝেমধ্যে কৃষকেরা সাপ মেরে মাটিতে পুঁতে ফেলছেন। প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফারসিম তারান্নুম হক প্রথম আলোকে বলেন, গত মার্চ মাসে একজন, এপ্রিলে একজন ও মে মাসে দুজন সাপে কাটা রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। মাঝেমধ্যে সাপে কাটা রোগী হাসপাতালে আসছেন। এখন পর্যন্ত হাসপাতালে কেউ মারা যায়নি।

ফারসিম তারান্নুম হক আরও বলেন, রাসেলস ভাইপার অত্যন্ত বিষধর সাপ। আতঙ্কিত না হয়ে রোগীকে ওঝার কাছে না নিয়ে সরাসরি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসতে হবে। হাসপাতালে যথেষ্ট পরিমাণ অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন আছে। সাপে কাটার পর সময়মতো চিকিৎসা দিতে পারলে রোগী বেঁচে যাবে।