সাপের কামড়ে সাপুড়ের দুই ছেলের মৃত্যু
কোথাও সাপ দেখার খবর পেলেই সব কাজ ফেলে সেখানে ছুটে যেতেন সাপুড়ে আলম হোসেন (৪৮)। হাতের নিপুণ কৌশলে নানা প্রজাতির বিষধর সাপ মুহূর্তেই কবজা করে নিতেন। বাবার এমন নৈপুণ্য দেখে দেখে অনেক কৌশল রপ্ত করেছিলেন বড় ছেলে ওবায়দুর রহমান। কিন্তু বাবার অজান্তে সাপ ধরতে গিয়ে প্রাণীটির কামড়েই একদিন প্রাণ হারান ওবায়দুর।
বড় ছেলের মৃত্যুর পাঁচ বছর পর গতকাল বৃহস্পতিবার আবারও সাপের কামড়ে আলমের ছোট ছেলে শাকিল হোসেনের (১৮) মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুরে নদীর পাড়ে একটি গোখরো সাপ ধরেন শাকিল। পরে অসাবধানতায় তাঁর বাঁ হাতে কামড় বসায় এটি। এতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধার করে দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
সাপের কামড়ে দুই ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় বাবা আলম হোসেন। সন্তানদের হারিয়ে তিনি এবার প্রতিজ্ঞা করেছেন, আর কোনো দিন সাপ ধরবেন না। সাপুড়ে আলমের বাড়ি দিনাজপুরের বিরামপুর পৌর শহরের পূর্ব জগন্নাথপুর হঠাৎপাড়া মহল্লায়।
আজ শুক্রবার সকালে আলমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর ছেলে শাকিলের মরদেহ গোসল করাচ্ছেন স্বজনেরা। পাশেই বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন পাঁচ বছরের ব্যবধানে দুই ছেলেকে হারিয়ে শোকাহত আলম হোসেন। আঙিনায় দাঁড়িয়ে থাকা স্বজন ও প্রতিবেশীদের সামনে বিলাপ করছেন সাপুড়ে আলম হোসেন। উপস্থিত সবার উদ্দেশে বলছেন, ‘সাপ ধরবার যায়ে মোর দুটা ছল (ছেলে) মরে গেল। মুই এখন কী নিয়ে বাঁচমু? মুই কান ধরে কিরা (অঙ্গীকার) কাটিছু, মুই আর জীবনে কোনো দিন সাপ ধরবার যামু না! মোর সংসারোত থেকে আর কাউকে হারাবার চাও না। মুই জীবনে আর সাপখেলাও দেখামু না।’
নিহত শাকিল বিরামপুর পৌর শহরের একটি স্যানিটারি কারখানায় সিমেন্টের রিং ও স্ল্যাব তৈরির কাজ করতেন। এ কাজের পাশাপাশি শখের বশে তিনি বিভিন্ন জায়গায় সাপ ধরে বেড়াতেন। কোনো সাপ বাড়িতে রেখে পোষ মানাতেন আলম হোসেন। পরে স্ত্রীকে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সাপখেলা দেখিয়ে অর্থ উপার্জন করতেন। কয়েক বছর ধরে শাকিল তাঁর বাবার সঙ্গে এলাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে নানা প্রজাতির সাপ ধরতেন। পরে বাবা ও ছেলে মিলে ওই সাপগুলো বিভিন্ন এলাকার সাপুড়ের কাছে বিক্রি করতেন।
সাপুড়ে আলমের প্রতিবেশী মেহেরাব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে পরে শাকিলকে বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাই। সেখানকার জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, শাকিলের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে ২০ শতাংশ হয়েছে। পরে ওই চিকিৎসক শাকিলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। দিনাজপুর মেডিকেলে নিলে বিকেল তিনটার দিকে সেখানকার চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।’