জাতীয় পার্টির প্রার্থীর নীরব প্রচারে সঙ্গে নেই দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা

উপনির্বাচনে অংশ নেওয়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবদুল হামিদ ভাসানি কয়েকজন কর্মী-সমর্থক সঙ্গে নিয়ে গণসংযোগ করে ভোট চাইছেন। আজ শুক্রবার সকালে সরাইল উপজেলা সদরের হাসপাতাল মোড় এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেওয়া জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী আবদুল হামিদ ভাসানি অনেকটা নীরবেই প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে রাত পর্যন্ত চলে তাঁর এই প্রচারণা কার্যক্রম। তবে এতে দলীয় নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি থাকে খুবই কম। পুরো নির্বাচনী এলাকায় জাতীয় পার্টি এখন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে আছে।

আবদুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচন আশা করি অনুকূলেই আছে। আমি আমার সাধ্যমতো প্রচারণা চালাচ্ছি। প্রতিদিন সকালে নামাজ পড়েই বের হই।’

এই আসন থেকে নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটি জিয়াউলের পরিবর্তে মনোনয়ন দেয় তাঁর জামাতা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়াকে। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে ছিলেন জিয়াউল। নির্বাচনের দুই দিন আগে সরে দাঁড়ান রেজাউল। তাতেও জিয়াউল হক মৃধা বিএনপির প্রার্থী উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার কাছে ৪৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।

জিয়াউল হক ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা। পরে তিনি পদ হারান। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে দলের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ কারণে জাপার স্থানীয় নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। দলের বড় অংশটির নেতৃত্বে আছেন জিয়াউল হক।

আরও পড়ুন

এবারের উপনির্বাচনে এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রথমে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়াকে। পরে তা পরিবর্তন করে প্রার্থী করা হয় দলটির যুগ্ম মহাসচিব আবদুল হামিদ ভাসানিকে। আর জিয়াউল হক মৃধা হন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এই আসনে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীর একটি বড় অংশ একাধিকবার সভা করে জিয়াউল হকের পক্ষে নির্বাচনে থাকার ঘোষণা দেন। তখন বহিষ্কার করা হয় সরাইল উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হ‌ুমায়ূন কবীরকে।

জিয়াউল হক নির্বাচনী প্রচারণায় বেশ এগিয়েও ছিলেন। নির্বাচনী প্রচারণার মাঠ যখন জমে উঠেছিল, তখনই সরিয়ে দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে। এরপর জিয়াউল হক মৃধাকেও মাঠ ছাড়তে ‘বাধ্য’ করা হয়। তিনি এখন কোনো প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করছেন না। জিয়াউলের সঙ্গে চুপ করে আছেন হুমায়ূন কবীরসহ দলের অনেকেই। তাঁদের নির্বাচনী কাজে লাগানো উদ্যোগ নেননি জাপার প্রার্থী আবদুল হামিদ ভাসানি। তিনি নীরবেই গণসংযোগ করছেন।

হুমায়ূন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যাঁরা জিয়াউল হকের পক্ষে ছিলাম, তাঁদের ১৬ আনার মধ্যে ১২ আনা এখন চুপচাপ বসে আছে। কোনো প্রার্থীই আমাদের ডাকছেন না, আমরাও যাচ্ছি না। জাপার বর্তমান প্রার্থীকে কেউ চিনে না। তাঁর কোনো ভোট নেই। লাঙ্গল প্রতীকের ভোট আছে, এখান থেকে কিছু পাবে। সে তাঁর নিজ কেন্দ্রেই খারাপ করবে।’

এদিকে আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদও আছেন ‘চাপে’। তিনি গত বৃহস্পতিবার থেকে তেমন প্রচারণা চালাচ্ছেন না। সবশেষ চার প্রার্থীর মধ্যে নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় আছেন কেবল উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া ও আবদুল হামিদ ভাসানি।

আরও পড়ুন

আবদুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আল মামুন সরকার ও একজন সংসদ সদস্য গতকাল এলাকায় এসে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের নিয়ে মিটিং করেছেন। এখানে একজন বিশেষ প্রার্থীর পক্ষে কথা বলা হয়েছে, যা নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। আমার জানামতে, কোনো নির্বাচিত সংসদ সদস্য নির্বাচন চলাকালে প্রচারণায় অংশ গ্রহণ করতে পারেন না। এটা নির্বাচনের আচরণবিধির লঙ্ঘন। এ বিষয়ে আমি কারও কাছে অভিযোগ করিনি। আমি আমার এলাকার জনগণের সঙ্গে আছি।’

অন্য প্রার্থীদের মতো নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে তাঁর ওপর কোনো ধরনের ‘চাপ’ নেই জানিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবদুল হামিদ ভাসানি বলেন, ‘সব মিলিয়ে অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। তবে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা রয়েছে, সব পরিস্থিতি মোকাবিলা করে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকার। আমি থাকব।’ জিয়াউল হক মৃধার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তিনি নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন, এখন সরে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর মানসিক অবস্থা ভালো না। তিনি এখন আমার সঙ্গে প্রচারণায় না থাকলেও দোয়া করেন। নির্বাচন চালিয়ে নিতে বলেছেন।’

আশুগঞ্জ উপজেলার জাপার সভাপতি আবদুর রউফ ও সাধারণ সম্পাদক মারাজ সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা আগে জিয়াউল হক মৃধার পক্ষে ছিলেন, এখন তিনি প্রার্থী না থাকায় লাঙ্গলের পক্ষে কাজ করছেন।

এই নির্বাচনে জাপার বর্তমান প্রার্থী নিয়ে জিয়াউল হকের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আরও পড়ুন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া বিজয়ী হয়েছিলেন। গত ১১ ডিসেম্বর তিনি দলীয় সিদ্ধান্তে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করায় আসনটি শূন্য হয়। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি এ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ৮ জানুয়ারিতে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর আটজনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। তাঁদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে নাম তিন আওয়ামী লীগ নেতা ও জাতীয় পার্টির দুবারের সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।

এখন পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে আছেন বিএনপির দলছুট পাঁচবারের সাবেক সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া (কলার ছড়া), আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদ (মোটর গাড়ি), জাপার কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব আবদুল হামিদ ভাসানি (লাঙ্গল) ও জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম (গোলাপ ফুল)।