সিলেটে বৃষ্টিপাত কমলেও বন্যা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি

সিলেটে বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কয়েকটি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির এখনো স্বাভাবিক হয়নি। এখনো পানিবন্দী অবস্থায় আছে বিভিন্ন এলাকা। শুক্রবার দুপুরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার তেলিখাল এলাকায়ছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেটে বৃষ্টিপাত কমলেও বন্যা পরিস্থিতির সেভাবে উন্নতি হয়নি। উল্টো কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জকিগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সিলেট নগরসহ অন্যান্য উপজেলাগুলোতেও পানি নামছে বেশ ধীরে।

গত চার দিন ধরে সিলেটের প্রধান দুই নদীর পানি ছয়টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও গতকাল শুক্রবার বেলা তিনটা থেকে একটি পয়েন্টে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদ-নদীর পানি নামলেও ধীরগতিতে নামায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি বোঝা যাচ্ছে না। অন্যদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর আগামী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়া বার্তায় রোববার পর্যন্ত বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে।

জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জকিগঞ্জ উপজেলায় কুশিয়ারা নদীর পাঁচটি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এতে প্রায় এক শটি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। একই নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে পানি উপচে প্রবেশ করছে। ফেঞ্চুগঞ্জ বাজার এখনো পানিতে নিমজ্জিত আছে। বিয়ানীবাজার উপজেলায়ও বিভিন্ন এলাকায় কুশিয়ারা নদীর পানি উপচে প্রবেশ করছে। এতে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী আনহার উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে পানির মধ্যেই তাঁরা ব্যবসা পরিচালনা করছেন। পানির মধ্যেই চলাফেরা করতে হচ্ছে সবাইকে। এর ফলে চর্মরোগ ছড়িয়ে পড়ছে।

জকিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবদুল আহাদ বলেন, কুশিয়ারা নদীর ভয়াবহ স্রোতে কয়েকটি স্থানে বাঁধ ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এতে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন চেষ্টা করেও বাঁধটি রক্ষা করতে পারেননি। তিনি বলেন, কুশিয়ারা নদীর পানি না কমা পর্যন্ত বাঁধটি মেরামত করা সম্ভব হবে না। এর ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগ সহসা কমছে না।

এ দিকে সিলেট নগরের বেশ কিছু এলাকা জলাবদ্ধ অবস্থায় আছে। নগরের তেররতন এলাকার বাসিন্দা নাজমুল আলম বলেন, বৃষ্টি কমে আসায় জলাবদ্ধ পানি কালো রং ধারণ করেছে। ময়লা পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এর মধ্যেই তাঁদের চলাফেরা করতে হচ্ছে।

নগরের জামতলা এলাকার বাসিন্দা হিমাংশু শীল বলেন, ঘরের একটি কক্ষে আজ সকাল পর্যন্ত পানি আছে। আবার বৃষ্টি হলে পানি বেড়ে যেতে পারে। এমন অবস্থায় বৃষ্টি যেন আর না হয় সে আশা করা ছাড়া আর কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি।

সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, গতকাল পর্যন্ত জেলার ২০৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৯ হাজার ৪৯৩ জন আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যায় এর মধ্যে ১ হাজার ১৮০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, বৃষ্টিপাত কমে আসায় পানি নামতে শুরু করেছে। তবে ধীরগতিতে পানি নামছে। আরও কয়েক দিন এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে।