জেলেদের দেওয়া চালের বস্তায় ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’ লেখা নিয়ে আলোচনা
শরীয়তপুরের চারটি ইউনিয়নের ১৫ হাজার ৪৪৬ জেলে পরিবারকে খাদ্যসহায়তা হিসেবে চাল দেওয়া হচ্ছে। খাদ্য বিভাগ থেকে সরবরাহ করা ওই চালের বস্তায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে স্লোগান লেখা রয়েছে। ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’ ওই স্লোগানের বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক দেখা দেওয়ায় খাদ্য বিভাগ ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চালের বস্তায় লেখা ওই স্লোগান মুছে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
শরীয়তপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের পদ্মা ও মেঘনা নদীতে জাটকা মাছ (৯ ইঞ্চির ছোট ইলিশ) সংরক্ষণ অভিযান চলছে। ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জেলেদের জাটকা নিধন বন্ধ রাখার জন্য তাঁদের খাদ্যসহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত চার মাস তালিকাভুক্ত ১৫ হাজার ৪৪৬ জেলে পরিবারকে মাসে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের চাল ৬ মার্চ থেকে সরবরাহ শুরু করা হয়েছে। আর ওই চাল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অধীনে থাকা বিভিন্ন খাদ্যগুদাম থেকে ইউনিয়ন পরিষদের অনুকূলে দেওয়া হচ্ছে। ওই চালগুলো ৩০ কেজি করে বস্তাবন্দী করা। খাদ্য অধিদপ্তরের ওই বস্তার ওপর তাদের মনোগ্রাম প্রিন্ট করা রয়েছে। এর ওপরে লেখা আছে ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’। এ ছাড়া ওই বস্তায় লেখা রয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর, নেট ওজন ৩০ কেজি, ফেব্রুয়ারি-২০২৪, আফিল জুট উইভিং মিলস লিমিটেড।
শরীয়তপুরের নড়িয়া, জাজিরা, ভেদরগঞ্জ ও গোসাইরহাট উপজেলার ইউনিয়নগুলো থেকে জেলেদের ওই খাদ্যসহায়তার চাল বিতরণ করা হচ্ছে। চালের বস্তায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্লোগান লেখা থাকায় স্থানীয় লোকজনের মধ্যে নানা ধরনের আলোচনা শুরু হয়। চাল বিতরণকাজে অংশ নেওয়া সরকারি কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদের সচিব, ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবেরা ঘটনাটি নিয়ে নানা ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন।
ভেদরগঞ্জের দক্ষিণ তারাবনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘খাদ্যগুদাম থেকে চালের বস্তা সরবরাহ করা হয়েছে। আমরা তা পরিষদে এনে জেলেদের মধ্যে বিতরণ শুরু করি। বিতরণ করার সময় বস্তার মধ্যে শেখ হাসিনার স্লোগান লেখা দেখে স্থানীয়রা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তখন কালো কালি দিয়ে তা মুছে দেওয়ার উদ্যোগ নিই।’
গোসাইরহাট উপজেলার কোদালুপর ইউনয়িন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘খাদ্যগুদাম থেকে চালের বস্তা সরবরাহ করার সময় ওই লেখা খেয়াল করেননি। ইউনিয়ন পরিষদের আনার পর আমাদের নজরে আসে। তখন তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাঁরা প্রথমে ওই অবস্থায়ই বিতরণের নির্দেশ দেন। স্থানীয় লোকজনের বাধার মুখে আমরা তা মুছে দিই।’
ভেদরগঞ্জের একটি ইউনিয়নে ওই চাল বিতরণ করার জন্য ‘ট্যাগ অফিসার’ হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন উপজেলা পর্যায়ের এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘খাদ্য বিভাগের দায়িত্বহীনতার কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। শত শত বস্তার মধ্যে ওই স্লোগান ছড়িয়ে পড়ায় আমরা বিতরণ করতে এসে মানুষের তোপের মুখে ও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছি।’
জেলেদের জন্য সরবরাহ করা চালগুলো আরও এক বছর আগে বস্তাবন্দী করা হয়েছিল জানিয়ে শরীয়তপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হুমায়ুন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিষয়গুলো খেয়াল করিনি। তাই এমন ভুল হয়েছে। আমাদের কাছে নিদের্শনা আছে বস্তা থেকে ওই লেখা কালো কালি দিয়ে মুছে দেওয়ার। এখন সে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, এমন হওয়ার কথা নয়। হয় বস্তা পরিবর্তন করে বিকল্পভাবে চাল দেওয়া হবে, না হলে কালো কালি দিয়ে ওই লেখা মুছে দেওয়া হবে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।