‘জেবনে তো বহু ভোট দিছি, এবারকার ভোট স্যালস্যালা’
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষ হয়ে গেছে। আজ বুধবার সকাল থেকে বেলা পৌনে দুইটা পর্যন্ত বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। দুপুর ১২টায় আফতাবগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় সুনসান পরিবেশ। বাইরে ভোটার নেই। পুলিশ, আনসার সদস্য, প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তারা অলস সময় কাটাচ্ছেন।
একটি বুথের ভেতর ভোট দিতে দেখা গেল এক নারীকে। তাঁর নাম আজো রানী (৫০)। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জেবনে তো বহু ভোট দিছি। এবারকার ভোট স্যালস্যালা (আমেজহীন)। ভোটার নাই, আরামে ভোট দেনো।’
ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এস এম শহিদুল ইসলাম বলেন, দুপুর ১২টা পর্যন্ত কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ১৮৪টি। ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৭৫। বিকেলের দিকে ভোটার বাড়তে পারে।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বদরগঞ্জ মহিলা কলেজ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, চারজন নারী ভোটার একটি বুথে ভোট দিচ্ছেন। অন্য বুথগুলো ছিল ভোটারশূন্য।
প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এস এম রফিকুল হাসান জানান, কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ১৯। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৬১৪টি।
বেলা পৌনে একটার দিকে বদরগঞ্জ পৌরসভার চাঁদকুঠিরডাঙ্গা বালিকা বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, ভেতরে ভোটার নেই। বাইরে কিছু লোক জটলা করছিলেন। এ সময় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী হাসান তবিকুর চৌধুরীর স্ত্রী স্বাধীনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘এসব ভোটের কোনো মানে হয় না। টাকা দিয়ে ভোট কিনছেন আরেক প্রার্থীর লোকজন।’
ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নওশেদ রেজা হতাশার সুরে বলেন, ভোটার উপস্থিতি খুবই কম। কেন্দ্রের ১ হাজার ৮০৯ ভোটারের মধ্যে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৩৫২। এর মধ্যে একটি নারী বুথে ওই সময়ে ভোট পড়েছে ২০১টি।
বিষ্ণুপুরের ফকিরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেলা সোয়া একটা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৩৫৭টি। সেখানকার ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৩৯০। ভোটার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রামের মানুষ ভোট দিবার আইসোচে না। কওচে, এইগলা ভোট দিয়া কী হইবে! ভোট দিতে ভালো নাগে, সেই জন্যে মুই ভোটটা দিনু।’
খালিসা হাজীপুর দাখিল মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রের ভোটার ২ হাজার ২১ জন। সকাল ১০টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ১১৩টি। চৌধুরীপাড়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ২২০টি। একেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৩৪৩।
বেলা ১টা ৪৭ মিনিট পর্যন্ত জামুবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৩৩৩টি। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৫৪।
মাহমুদুল হাসান আরও বলেন, ভোটার আসছে কম। দু–একজন করে এসে ভোট দিয়ে যাচ্ছেন। ওই কেন্দ্রের ভোটার আরবী খাতুন (৫৫) বলেন, ‘এবার আরাম করি ভোট দিছু। কোনো ভিড়াভিড়ি নাই।’
তবে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি যেমনটাই হোক, এবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হচ্ছেন প্রতিদ্বন্দ্বী দুই খালাতো ভাইয়ের একজন। ওই পদে ওই দুই ভাই ছাড়া আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নেই। দুই খালাতো ভাইয়ের একজন হচ্ছেন উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক হাসান তবিকুর চৌধুরী। অপরজন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলে রাব্বী (সুইট)। ফজলে রাব্বী বর্তমানে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। এর আগের মেয়াদেও তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
হাসান তবিকুর চৌধুরী রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ও বদরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র টুটুল চৌধুরীর চাচাতো ভাই। তবে ওই সংসদ সদস্য ও মেয়র প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সমর্থন দিয়েছেন ফজলে রাব্বীকে। মেয়র তাঁর পক্ষে বিভিন্ন নির্বাচনী সভা-সমাবেশে বক্তব্য দিয়ে ভোট প্রার্থনাও করেছেন।
অন্যদিকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হাসান তবিকুর চৌধুরীকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দিয়েছেন কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার (বিটু)। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন বিশ্বনাথ সরকার। এই নির্বাচনে ইতিমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক রেজাউল করিম।
বদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ১০৩টি। ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪৩ হাজার ১০৮। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২২ হাজার ৭০৫ ও নারী ভোটার ১ লাখ ২০ হাজার ৩৯৫ জন। এখানে হিজড়া ভোটার আটজন। ভোটকেন্দ্রগুলোয় নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা।