নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত পাঁচজনের পরিচয় মিলছে না। এ ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী নেই, নিহত ব্যক্তিদের কারও মুঠোফোন ছিল না, স্বজনের খোঁজও মিলছে না। তাঁদের কারও জাতীয় পরিচয়পত্রও ছিল না। তবে তাঁরা কারা? তাঁরা থাকতেন কোথায়? কেউই কি চেনেন না তাঁদের?
এসব প্রশ্ন তুলে রেলওয়ে পুলিশ বলছে, এখন পর্যন্ত তাঁদের একজনেরও পরিচয় পাওয়া যায়নি, তাঁদের কোনো স্বজনের সন্ধানও মেলেনি। নিহত ব্যক্তিদের ছবি ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট রুটের সব রেলস্টেশনে পাঠানো হয়েছে। এসব স্টেশনে অবস্থানরত ব্যক্তিদের লাশগুলোর ছবি দেখিয়ে তাঁদের সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছেন রেলওয়ে পুলিশের সদস্যরা। তাঁদের চেনেন বা কখনো দেখেছেন, এখন পর্যন্ত এমন একজনকেও পাননি তাঁরা।
আজ বুধবার সকালে আদালতের অনুমতি নিয়ে নিহত ব্যক্তিদের ডিএনএ ও ভিসেরা টেস্টের জন্য উদ্ধার করা আলামত ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এর আগে নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। তবে এখনো ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পায়নি রেলওয়ে পুলিশ।
চলন্ত ট্রেনে একসঙ্গে একই জায়গায় পাঁচজনের কাটা পড়ে মৃত্যুর বিষয়টি সন্দেহ জাগাচ্ছে। মারামারি বা ধাক্কাধাক্কি করে ট্রেনের ছাদ থেকে দুই বগির মাঝে বা ইঞ্জিন থেকে পড়ে গিয়ে, রেললাইনে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় শুয়ে-বসে থেকে বা অন্য কোথাও হত্যার পর তাঁদের লাশ ওই রেললাইনে ফেলে রাখা হয়েছে কি না, এই তিনটি প্রশ্ন সামনে রেখে তদন্ত করছে রেলওয়ে পুলিশ। এ ঘটনায় ভৈরব রেলওয়ে থানায় করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. শহীদুল্লাহকে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শহীদুল্লাহ বলেন, তাঁদের আগে হত্যার পর লাশ রেললাইনে ফেলে রাখা হয়েছিল কি না, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে তা জানা যাবে। আর ভিসেরা প্রতিবেদন হাতে পেলে জানা যাবে, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তাঁরা রেললাইনে শুয়ে-বসে ছিলেন কি না? তাঁদের কোনো স্বজনের সন্ধান যদি পাওয়া যায়, তবে ডিএনএ প্রতিবেদনের সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।
শহীদুল্লাহ আরও বলেন, ‘সেদিন তাঁদের সঙ্গে ঠিক কী ঘটেছিল, তা খুঁজে বের করতে সব রকমের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেলে তদন্ত কিছুটা সহজ হয়ে যেত। যদি একজনের পরিচয়ও শনাক্ত হয়, তদন্ত সঠিক পথে মোড় নেবে।’ মনে হচ্ছে, তাঁরা কেউই সচেতন পরিবারের সদস্য নন, যদি হতেন তাহলে গত ৬০ ঘণ্টায় কেউ অন্তত খোঁজ নিতেন।
গত সোমবার সকাল ৯টার দিকে রায়পুরার মেথিকান্দা রেলওয়ে স্টেশনসংলগ্ন কমলপুর এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হওয়া পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করে রেলওয়ে পুলিশ। পরিচয় শনাক্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করেও ব্যর্থ হন।
ধারণা করা হচ্ছে, ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকা মেইল ট্রেনে কাটা পড়ে তাঁদের মৃত্যু হয়। তাঁদের বয়স ১৮ থেকে ২৫। এরই মধ্যে ময়নাতদন্ত শেষে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে রেলওয়ে কবরস্থানে তাঁদের দাফন করা হয়েছে।