‘গাঙ্গে এত পানি আগে কখনো দেখি নাই। সময় যতই যাইতাছে, গাঙ্গের পানি ততই বাড়তাছে। আটাশির বন্যার চেয়েও ভয়াবহ এবার।’ উদ্বেগ আর দুশ্চিন্তা নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী নয়াবিল ইউনিয়নের হাতিপাগার গ্রামের ভোগাই নদীপারের বাসিন্দা হাফিজ উদ্দিন (৭০)।
চারদিকে পানি থাকায় দুই দিন ধরে চুলায় আগুন জ্বলেনি জয়নালের বাড়ি। কিছু শুকনা খাবার খেয়ে দিন পার করেছেন।
নালিতাবাড়ী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, কোথাও পাহাড়ি ঢলের পানি বাড়ছে, আবার কোথাও পানি কমতে শুরু করেছে। বেশ কিছু জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া অনেক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পৌর শহর থেকে কয়েকটি ইউনিয়নে প্রবেশের সড়কও বন্ধ রয়েছে।
গারো পাহাড়ের কাছাকাছি ইউনিয়ন পোড়াগাঁয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখাকার বিভিন্ন সড়ক পাহাড়ি ঢলের কারণে ভেঙে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই ইউনিয়ন। পোড়াগাঁয়ের বাতকুঁচি গ্রামে ঢলের পানিতে অনেক কাঁচা সড়ক ও বাড়িঘর ভেঙে গেছে।
নয়াবিল ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, সেই ইউনিয়নেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখনো কিছু রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে আছে। ভোগাই নদীর বাঁধ ভেঙে ও বাঁধ উপচে নয়াবিল ইউনিয়নের ১৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানিতে এলাকার মানুষ কষ্টে পড়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকটি গ্রামে শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পোড়াগাঁও, নয়াবিল, রামচন্দ্রকুড়া, বাঘবেড়, নন্নী, কলসপাড়, যোগানিয়া ইউনিয়নসহ পৌরসভার গড়কান্দা ও নিচপাড়া এলাকা প্লাবিত হয়। এসব এলাকার বিভিন্ন স্থানে নদীর বাঁধ ভেঙে ও বাঁধ উপচে প্রবল বেগে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে ৭টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় সাত হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জলাবদ্ধতায় ৩৫ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন।
পোড়াগাঁও আন্ধারুপাড়া গ্রামের চেল্লাখালী নদীপারের বাসিন্দা আমজাদ হোসেন (৬৫) বলেন, ‘গাঙ্গে এত পানি আগে কখনো দেখি নাই। সময় যতই যাইতাছে, গাঙ্গের পানি ততই বাড়তাছে। পাল্লা দিয়া বৃষ্টিও নামছে। থামার কোনো রহম নাই।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল ওয়াদুদ বলেন, উপজেলায় বাঘবেড়, যোগানিয়া, নয়াবিল, কলসপাড়, পোড়াগাঁও ইউনিয়নে প্রায় ৪ হাজার মেট্রিক টন আমনের ফসল এবং ৫০ হেক্টর শাকসবজির খেত পানিতে ডুবে গেছে। পানি নেমে গেলে প্রকৃতপক্ষে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, পাহাড়ি ঢলে ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর বাঁধ ভেঙে ও বাঁধ উপচে ৮টি ইউনিয়নে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে জলাবদ্ধতায় ৩৫ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। প্রায় সাত হাজার মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভার তরফ থেকে ৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ৫ হাজার পরিবারের মাঝে শুকনা খাবারের প্যাকেট ও খাওয়ার পানি দেওয়া হয়েছে। পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধার ও ত্রাণকাজ পরিচালনায় ১২ ইউনিয়নের জন্য আলাদা করে নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে।