নাবি জাতের নতুন আম, নাম ‘আয়ানভোগ’
সুস্বাদু জাতের আমগুলো এখন শেষের পথে। পাওয়া যাচ্ছে খুবই অল্প পরিমাণে, দামও বেশ চড়া। আমচাষিদের আগ্রহ এখন সুস্বাদু নাবি জাতের দিকে। চাষিদের অনেকে এখন নতুন নতুন নাবি জাতের আমের সন্ধান করেন। এমন আগ্রহ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চকনরেন্দ্র গ্রামের আমচাষি মো. মঈনুদ্দিন নিজের বাগানের একটি গাছের দুটি ডালের আম পর্যবেক্ষণে পেয়েছেন নাবি জাতের আম, খেতে বেশ সুস্বাদু।
কৃষিবিদদের মতে, নতুন এই জাত নাবি জাতের সুস্বাদু আমের তালিকায় হতে পারে নতুন সংযোজন।
এ বছর নিবিড়ভাবে আমের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক বিমল কুমার প্রামাণিক। তাঁর সঙ্গে মঈনুদ্দিনের বাগানে গিয়ে দেখে যায়, ১৪ থেকে ১৫ বছর বয়সী একটি গাছের শুধু দুটি ডালে ঝুলছে ডাঁশা ডাঁশা আম। সব কটি আম প্রায় একই আকারের এবং দেখতে আকর্ষণীয়। বাগানের আর কোনো গাছেই আম নেই। গাছটির অন্য ডালে ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের জনপ্রিয় বোম্বাই আম। সেগুলো গাছ থেকে পেড়ে নেওয়া হয়েছে আগেই।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারুকলা বিষয়ে স্নাতকোত্তর পাস করা আমচাষি মঈনুদ্দিন বলেন, প্রায় দেড় বিঘা বাগানের মধ্যে ছয় থেকে সাত বছর বয়সী গাছে টপ ওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে (গাছের ডালের ডগায় জোড়কলমে মাধ্যমে অন্য গাছের ডগা স্থাপন) তিনি জাত পরিবর্তন করে ল্যাংড়া ও বোম্বাই জাতের বাগানে পরিবর্তন করেন। কিন্তু একটি গাছের দুটি ডালে সাত বছর থেকে ধরছে একটি অচেনা আম। মৌসুম শেষে বোম্বাই আমের সঙ্গে পেড়ে নিতেন আমগুলো। কিন্তু আমগুলো বোম্বাই আমের সঙ্গে পাকত না। এমনকি ১৫ দিনেও নয়, বরং খোসা কুচকে যেত। গত তিন বছর ধরে তিনি আগস্টের শেষ দিকে ওই দুই ডালের আম পাড়েন। এই আম পাকতে কমপক্ষে সাত দিন লাগে। এবার বৃষ্টি কম হওয়ায় আবহাওয়া রুক্ষ। তাই আগাম পেকেছে আম। ১৫ আগস্ট আমগুলো পেড়ে তিনি পরের দিন হর্টিকালচার সেন্টারে নিয়ে আসেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারে আমগুলোর গুণাগুণ পরীক্ষা করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপপরিচালক পলাশ সরকার, সেন্টারের উপপরিচালক বিমল কুমার প্রামাণিক, সহকারী উদ্যান উন্নয়ন কর্মকর্তা শাহীন সালেহ উদ্দিন, উপসহকারী উদ্যান কর্মকর্তা ফইজুর রহমান, আমচাষি মো. মঈনুদ্দিনসহ অন্যরা।
পরীক্ষার ফলাফলে পাওয়া যায়, আমটির ওজন ৫০০ থেকে ৫৫০ গ্রাম। খোসা পাতলা, আঁশহীন, রসাল ও আঁটি পাতলা আমটি মিষ্টি।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা পলাশ সরকার বলেন, আমের এসব গুণাবলি একটি সুস্বাদু উন্নত জাতের আমের বৈশিষ্ট্য বহন করে। প্রাকৃতিকভাবে শংকরায়িত হয়ে আমটির সৃষ্টি হয়েছে। ভালোভাবে পরিচর্যা করলে এবং এই জাতের ডগা নাবি জাতের গাছে জোড়কলমের মাধ্যমে স্থাপন করলে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ফলটি থাকবে। এ সময় সুস্বাদু আমের সংখ্যা একেবারেই কম। গৌড়মতি ও বারি-৪ ছাড়া অন্য আম নেই বললেই চলে। চাষিরা এই আম চাষ করে ভালো দাম পাবেন বলে আশা করা যায়। মঈনুদ্দিন নাতি আয়ানের নামানুসারে নাম রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করায় আমটির নাম হয়েছে ‘আয়ানভোগ’।
হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক বিমল কুমার প্রামাণিক বলেন, ওই জাতের ডগা দিয়ে ইতিমধ্যে ১৪টি চারাগাছ তৈরি করে রোপণ করেছেন আমচাষি মঈনুদ্দিন। এই সেন্টারেও এই জাতের আমের চারা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে এ বছর।