গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য
সাঘাটা ও ফুলছড়িকে পৌরসভায় উন্নীতকরণ আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি
গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের উপনির্বাচনে (পুনর্ঘোষিত) বেসরকারিভাবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্রার্থী মাহমুদ হাসান (রিপন)। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন। নির্বাচনের আগে উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এখন তিনি এলাকার সংসদ সদস্য। জেলার সবচেয়ে অবহেলিত দুই উপজেলা সাঘাটা ও ফুলছড়ির উন্নয়ন–ভাবনা নিয়ে মাহমুদ হাসানের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রথম আলোর গাইবান্ধা প্রতিনিধি শাহাবুল শাহীন।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলা গাইবান্ধা জেলার মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত এলাকা বলা হয়। দুই উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি নদীর ওপারে। এ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য প্রয়াত ফজলে রাব্বী মিয়া দুই দফায় ডেপুটি স্পিকার ছিলেন। তারপরও প্রত্যাশিত উন্নয়ন হয়নি। দুই উপজেলার উন্নয়নে আপনি কী কী করতে চান?
মাহমুদ হাসান: আমার প্রথম কাজ হবে—এক ইউনিয়নের সঙ্গে আরেক ইউনিয়নের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন। এখানে ইউনিয়নগুলোর মধ্যে যোগাযোগব্যবস্থা নাজুক হয়ে আছে। বিশেষ করে, চরাঞ্চলে পাকা রাস্তা হয়নি। কাঁচা রাস্তা থাকলেও যানবাহন নিয়ে চলাচল করা যায় না। ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করতে হয়। উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা ছাড়া এলাকার উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই সব রাস্তা পাকা করা হবে। দুই উপজেলাকে দেশের মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলব।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: দুই উপজেলার প্রধান সমস্যা নদীভাঙন ও বন্যা। নদীভাঙনে প্রতিবছর সরকার প্রচুর টাকা খরচ করলেও কার্যত ভাঙন রোধ হচ্ছে না। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলোও সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ। ভাঙন রোধ ও বাঁধ সংস্কারের বিষয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
মাহমুদ হাসান: মূলত দুই উপজেলা ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীবেষ্টিত। এতে প্রতিবছর বর্ষার সময় এখানে নদীভাঙন শুরু হয়। নদীতে পানি বাড়লেই বন্যা দেখা দেয়। তাই ফুলছড়ি উপজেলার বালাসি থেকে সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণ ও তা পাকাকরণ করা হবে। এ ছাড়া নদীর তীরে সিসি ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ে কথা বলব।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: ফুলছড়ি উপজেলার বালাসিঘাট থেকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদঘাট পর্যন্ত রেলপথসহ ব্রহ্মপুত্র সেতু নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন, সমাবেশসহ বিভিন্ন আন্দোলন চলছে। সাঘাটা ও ফুলছড়ির মানুষ, এমনকি গাইবান্ধার মানুষেরও এটা প্রাণের দাবি।
মাহমুদ হাসান: ব্রহ্মপুত্র নদটি ভাঙনকবলিত। তাই এখানে সেতু নির্মাণ সম্ভব নয়। তবে ব্রহ্মপুত্র নদের তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ করা যাবে। এ জন্য সরকারকে মেগা প্রকল্প হাতে নিতে হবে। এ নিয়ে ইতিমধ্যে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। এটি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেব।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: দুই উপজেলা শহরকে পৌরসভায় উন্নীত করার জন্য স্থানীয় জনগণ দাবি জানিয়ে আসছেন। এ বিষয়ে আপনার ভাবনা কী?
মাহমুদ হাসান: সাঘাটা ও ফুলছড়িকে পৌরসভায় উন্নীতকরণ আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। মাত্রই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলাম। পৌরসভা বাস্তবায়নের আগে সীমানা নির্ধারণসহ নানা জরিপ করতে হবে। তারপরও যত দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্ভব এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেব।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: দুই উপজেলার চরাঞ্চলের মানুষের জেলা ও উপজেলা শহরের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। কিন্তু এসব এলাকায় প্রয়োজনীয় নৌকা নেই। ফলে মুমূর্ষু রোগীকে নদী পারাপার হয়ে হাসপাতালে নিতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। অনেক চরে হাটবাজার ও ওষুধের দোকান নেই। এ সমস্যা সমাধানে আপনার পরিকল্পনা আছে কোনো?
মাহমুদ হাসান: চরাঞ্চলের মানুষের জন্য নৌকার সংখ্যা বাড়ানো হবে। দ্রুতগামী নৌযান চালুর বিষয়েও পদক্ষেপ নেব। চরাঞ্চলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গড়ে তোলা ও স্থায়ীভাবে চিকিৎসক থাকার ব্যবস্থা করা হবে। চরে হাটবাজার ও ওষুধের দোকান স্থাপনের স্থানীয় লোকজন ও সরকারের দৃষ্টিতে আনা হবে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: আওয়ামী লীগ বর্তমানে ক্ষমতায় আছে। আপনি দলীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাই দলীয় সংসদ সদস্যের কাছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা বেশি। আপনি মানুষের প্রত্যাশা পূরণে কতটুকু ভূমিকা রাখবেন?
মাহমুদ হাসান: মানুষের প্রত্যাশা থাকাটা স্বাভাবিক। কারণ, সাধারণ মানুষ আমার ওপর আস্থা করেছেন বলেই বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছেন। তাঁদের আস্থা ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করব। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন দপ্তরে অনুরোধ করে এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছি। এখন জনগণ নৌকার পক্ষে রায় দিয়েছেন। জাতীয় সংসদে কথা বলার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। জনগণের সব দাবিই আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল। পর্যায়ক্রমে জনগণের সব দাবি বাস্তবায়ন করব।