দিনাজপুরে বন্ধের নির্দেশনার মধ্যেও অনেক মাধ্যমিক বিদ্যালয় খোলা ছিল
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে বিদ্যালয় বন্ধ রাখার কথা। সে হিসেবে আজ সোমবার সকালে দিনাজপুরে প্রাথমিকের পাঠদান বন্ধ থাকলেও অনেক মাধ্যমিক বিদ্যালয় খোলা ছিল। বাদ যায়নি জেলা প্রশাসন পরিচালিত দিনাজপুর কালেক্টরেট উচ্চবিদ্যালয়ও। তবে শীতের তীব্রতা না কমা পর্যন্ত বিদ্যালয় বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন অভিভাবকেরা।
আজ সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের বড় মাঠসংলগ্ন দিনাজপুর কালেক্টরেট উচ্চবিদ্যালয়ে প্রাত্যহিক সমাবেশ (অ্যাসেম্বলি) করতে দেখা যায়। ছেলেকে বিদ্যালয়ে নিয়ে এসেছেন জুয়েল রানা নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘এমন ঠান্ডায় সরকার নির্দেশনা দিয়েছে স্কুল বন্ধ রাখার। তারপরও স্কুল খোলা। কী করবেন, স্কুল যেহেতু খোলা অন্য শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসছে, আমার ছেলেকে যদি না নিয়ে আসি, তাহলে তো সে পিছিয়ে যাবে। সকালে ঘুম থেকে উঠতেই চায় না বাচ্চারা। একরকম জোর করেই স্কুলে আনলাম।’
দিনাজপুর জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, আজ দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এক সপ্তাহে জেলায় চার দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
দিনাজপুর শহরের বালুয়াডাঙ্গা এলাকায় আজ সকালে বিদ্যালয়ে আসার সময় কথা হয় সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে। সে বলে, ‘বন্ধুরা স্কুলে যাচ্ছে, তাই বাবা বলল স্কুলে যেতে। সকালে খুব ঠান্ডা। লেপের ভেতর থেকে বের হতে মন চায় না।’
দিনাজপুরে টানা দুই সপ্তাহ ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। গত দুই দিনে কুয়াশা কিছুটা কমলেও বয়ে যাচ্ছে হিমেল বাতাস। দুপুরের দিকে কিছু সময় সূর্যের আলোর দেখা মিললেও ঠান্ডা বাতাসের কারণে রোদ অনুভূত হচ্ছে না। প্রচণ্ড ঠান্ডা ও হাড়কাঁপানো শীতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে মানুষ বের হচ্ছে না। সেখানে তীব্র শীত উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
শহরের ঈদগাহ বস্তি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান জানান, বিদ্যালয় খোলা। শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম। বিদ্যালয় খোলা রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, মাধ্যমিক অফিস থেকে তিনি কোনো নির্দেশনা পাননি। একই কথা বলছেন কালেক্টরেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক আখের আলীও। তিনি বলেন, ‘মাউশি থেকে যে চিঠি পেয়েছি, তারপর আর কোনো চিঠি কিংবা কোনো নির্দেশনা তো আমরা পাইনি। অনেকে স্কুল খোলা রেখেছে, তাই আমরাও খোলা রেখেছি।’
আজ সকাল থেকে আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের সঙ্গে কথা হয়েছে এ প্রতিবেদকের। তাঁরা জানিয়েছেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পাঠানো চিঠি প্রধান শিক্ষকদের কাছে থাকলেও পরবর্তী সময়ে জেলা শিক্ষা অফিসের সঙ্গে প্রধান শিক্ষকদের কোনো সমন্বয় হয়নি কিংবা প্রধান শিক্ষকেরা কোনো নির্দেশনাও পাননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘জেলা শিক্ষা অফিসার চলেন তাঁর মতো করে। মনে হচ্ছে, মাউশিকেও তিনি কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না। স্কুল বন্ধ বা খোলা রাখার বিষয়ে তিনি কী ব্যবস্থা নেবেন, সে বিষয়ে অন্তত আমাদের পরিষ্কার করা দরকার ছিল।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে আজ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে রংপুর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দিনাজপুরে কি আজকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা?’ তাপমাত্রা ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস জানালে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ব্যবস্থা নেবেন। আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলতেছি।’