ভোলায় শুরু হয়েছে পাখিশুমারি, ৮ দিন বিভিন্ন নদীতে ঘুরবেন পর্যবেক্ষকেরা
দ্বীপ জেলা ভোলায় জলচর পরিযায়ী পাখিশুমারি শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ বার্ডস ক্লাবের আয়োজনে আজ সোমবার এ শুমারি শুরু হয়। পাখির বিচরণক্ষেত্র-জীবনমান, স্থানীয় মানুষ ও পরিবেশের নেতিবাচক পরিবর্তন প্রতিরোধে ৩৭ বছর ধরে ভোলার উপকূলে এ শুমারি হয়ে আসছে।
আজ সকাল সাতটার দিকে ভোলা খালের খেয়াঘাট থেকে পাখি–গবেষক ও বাংলাদেশ বার্ডস ক্লাবের সদস্য মো. ফয়সালের নেতৃত্বে একটি দল জেলার উত্তরে ট্রলারযাত্রার মাধ্যমে শুমারির কার্যক্রম শুরু করে। দলটি ৮ দিন (৬-১৩ জানুয়ারি) নদীতে থাকবে। এ ছাড়া ৫ ও ১৪ জানুয়ারি দুই দিন ঢাকা-ভোলা পথে থাকবে।
পাখিশুমারি দল সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ বার্ডস ক্লাব ১৯৮৭ সাল থেকে সারা বিশ্বের সঙ্গে ভোলার উপকূলেও জলচর পাখিশুমারি করে আসছে। এবারের দলে আছেন বার্ডস ক্লাবের সম্পাদক, পাখি–পর্যবেক্ষক ও পর্বতারোহী এম এ মুহিত, বার্ডস ক্লাবের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও পাখি–গবেষক সায়েম ইউ চৌধুরী, পাখি–বিশেষজ্ঞ নাজিম উদ্দিন খান ও রবিউল ইসলাম। এ ছাড়া দলের সঙ্গে ছিলেন বার্ডস ক্লাবের আরেক সদস্য ভরত দা, সাংবাদিক অচিন্ত্য মজুমদার প্রমুখ।
দলের সদস্যরা জানান, ভোলার জাঙ্গালিয়া নদী ও ভোলা খালের মোহনা খেয়াঘাট থেকে পাখিশুমারি শুরু করেছেন তাঁরা। তেঁতুলিয়া, ইলিশা, মেঘনা, মেঘনা-তেঁতুলিয়ার সাগরমোহনা, বুড়া গৌরাঙ্গ ও আবার তেঁতুলিয়া নদী হয়ে ১৩ জানুয়ারি সন্ধ্যা নাগাদ খেয়াঘাটে ফিরে আসবেন তাঁরা। খেয়াঘাট থেকে ওই দিন লঞ্চে উঠে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবে দলটি।
পাখি–বিশেষজ্ঞ ও পর্যবেক্ষক মো. ফয়সাল বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে ভোলায় সবচেয়ে বেশি জলচর পরিযায়ী পাখি আসে, যা মোট পাখির প্রায় ৬০ শতাংশ। এ অঞ্চলে অনেক বিপন্ন পাখির দেখা মেলে। সারা পৃথিবীতে প্রতিবছর পাখিশুমারি হয়, ভোলার পাখিশুমারি তারই অংশ। ভোলার চারপাশের নদী ও সাগরমোহনার মধ্যে জেগে ওঠা কাদাচরে শুমারি দল ট্রলার ও নৌকা নিয়ে ঘুরে ঘুরে বাইনোকুলার ও দূরবীক্ষণ দিয়ে জলচর পাখি গণনা করবে।
কীভাবে পাখি গণনা করা হয়, তা জানতে চাইলে এম এ মুহিত বলেন, ‘আমরা পাখি গণনা করি ব্লক ম্যাথডে (পদ্ধতি)। গণনার কাজে টেলিস্কোপ (দূরবীক্ষণ) ব্যবহার করি। দূরের পাখি ও পাখির ঝাঁক কাছে দেখা যায়। তখন একটা একটা করে গণনা হয়। যখন ঝাঁক ধরে পাখি থাকে, তখন ধারণা করে গণনা করা হয়। এটা পাখি–পর্যবেক্ষকদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা। দলের সবার কাছে দূরবীক্ষণ থাকে। দলের একাধিকজন গণনা করেন। সবার মতামত নিয়ে যেটি গ্রহণযোগ্য হয়, সে সংখ্যা লিপিবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারপরও ঝাঁক গণনার ক্ষেত্রে শতভাগ সঠিক হয় না। উনিশ-বিশ হয়।
পাখি গণনা করা হয় ব্লক ম্যাথডে (পদ্ধতি)। গণনার কাজে টেলিস্কোপ (দূরবীক্ষণ) ব্যবহার করা হয়। দূরের পাখি ও পাখির ঝাঁক কাছে দেখা যায়। তখন একটা একটা করে গণনা হয়। যখন ঝাঁক ধরে পাখি থাকে, তখন ধারণা করে গণনা করা হয়।
পাখি গণনার উদ্দেশ্য কী, তা জানতে চাইলে বাংলাদেশ বার্ডস ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও পাখি–বিশেষজ্ঞ সায়েম ইউ চৌধুরী বলেন, ‘পাখি পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পরিযায়ী পাখি যারা শীতে এ দেশে আসে, এদের সংখ্যা দিয়ে আমরা জানতে পারি, পৃথিবীতে এদের সংখ্যা কত, পাখির অবস্থান নিরূপণ করতে পারি।’
সায়েম ইউ চৌধুরী আরও বলেন, ‘ইস্ট এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া ফ্লাইওয়েসহ অনেকগুলো দেশের মধ্য দিয়ে পাখি এ দেশে আসতে উড়ালপথ ব্যবহার করে। বাংলাদেশে যদি পাখি কমে যায়, তাহলে মনে করতে হবে, এখানে সমস্যা আছে অথবা উড়ালপথে সমস্যা আছে। সমস্যার আলোকে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। এতে পাখিরও উপকার হবে, স্থানীয় মানুষের ও পরিবেশের উপকার হবে।’
পাখি–বিশেষজ্ঞরা জানান, জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তনে গত ৩৭ বছরে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা অনেক কমেছে।