২১ দাবিতে তিন ঘণ্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ শ্রমিকদের, তীব্র যানজট

বেতন বাড়ানোসহ ২১ দফা দাবিতে শ্রমিকদের ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ। আজ বুধবার সকালে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভিটিকান্দি এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় বেতন বৃদ্ধিসহ ২১ দফা দাবিতে প্রায় তিন ঘণ্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন একটি কারখানার শ্রমিকেরা। আজ বুধবার সকাল আটটা থেকে উপজেলার ভিটিকান্দি এলাকায় এই বিক্ষোভের কারণে মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বেলা সোয়া ১১টার দিকে বিক্ষোভকারী শ্রমিকদের দাবির ব্যাপারে আলোচনার আশ্বাস দিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে আনেন পুলিশ সদস্যরা।

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন কারণে কয়েক মাস আগে থেকে জেএমআই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছিল। এর মধ্যে ১০ অক্টোবর সরকারি ঘোষণা উপেক্ষা করে কারখানা খোলা রাখা হয়। ওই দিন একজন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে ছুটি না দিয়ে উল্টো খারাপ আচরণ করা হয় বলে অভিযোগ শ্রমিকদের। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও তাঁকে হাসপাতালে না নিয়ে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়। অসুস্থ অবস্থায় বিনা চিকিৎসায় মারা যান সেই শ্রমিক। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন শ্রমিকেরা। এর পর থেকে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তাঁরা। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আজ সকাল আটটার দিকে বিভিন্ন দাবিদাওয়া তুলে ধরে বিক্ষোভ করেন প্রতিষ্ঠানটির কয়েক শ পুরুষ ও নারী শ্রমিক।

বিক্ষোভকারী শ্রমিক আরমান বলেন, ‘দুই দিন আগে আমাদের একজন শ্রমিক ছুটি না পেয়ে এ কারখানায় চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন। কারখানার মধ্যে ভালো কোনো চিকিৎসাব্যবস্থা নেই। তা ছাড়া আমাদের ৯ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয়। দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির বাজারে সামান্য টাকা দিয়ে আমার সংসার চলে না।’

আন্দোলনকারী আরেক শ্রমিক স্বপন মিয়া বলেন, ‘কোম্পানি কর্তৃপক্ষ যে আচরণ করে, তা অমানবিক। সরকারি কোনো নিয়মনীতি তোয়াক্কা করে না তারা। জোর করে শ্রমিকদের ওভারটাইম করতে বাধ্য করা হয়। অসুস্থ হলে হাসপাতালে যেতে দেওয়া হয় না। যে বেতন দেওয়া হয়, তাতে সংসার চলে না। বিভিন্ন কারণে বাধ্য হয়ে ২১ দফা দাবি নিয়ে আমরা মাঠে নেমেছি।’

শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধের কারণে শত শত মালবাহী ও যাত্রীবাহী যানবাহন আটকা পড়ে
ছবি: প্রথম আলো

শ্রমিকদের উল্লেখযোগ্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক অবস্থায় সব স্থায়ী জ্যেষ্ঠ শ্রমিকদের বর্তমান বেতন থেকে চার হাজার টাকা বাড়াতে হবে, কোনো শ্রমিক ও তাঁর স্বজনেরা অসুস্থ হলে ছুটি দিতে হবে, কোম্পানির ভেতর চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখতে হবে, বেতন–বোনাস সময়মতো পরিশোধ করতে হবে। দাবি আদায় না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শ্রমিকেরা।

আরও পড়ুন

এদিকে সকাল থেকে দফায় দফায় শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে চলে যেতে পুলিশ অনুরোধ জানালেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মহাসড়ক না ছাড়ার ঘোষণাতে তাঁরা অনড় থাকেন। এ সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয় দিকে গাড়ির দীর্ঘ সারি তৈরি হয়।

ঢাকাগামী ট্রাকচালক শাহ আলম জানান, দীর্ঘ সাড়ে তিন ঘণ্টা মহাসড়কে যানজটে আটকা ছিলেন। বেলা সোয়া ১১টার দিকে সড়ক ফাঁকা হলে ঢাকার দিকে রওনা হয়েছেন। তিনি বলেন, সকালে মহাসড়ক আটকে দেওয়ায় শত শত মালবাহী ও যাত্রীবাহী যানবাহন যানজটে পড়ে ছিল। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি ছিল যাত্রী পরিবহন করা গাড়িগুলোর।

বেলা সোয়া ১১টার দিকে বিক্ষোভকারী শ্রমিকদের দাবিদাওয়ার ব্যাপারে আলোচনার আশ্বাস দিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে আনেন পুলিশ সদস্যরা। দুপুর ১২টা পর্যন্ত শ্রমিকেরা কোম্পানির ভেতরে অবস্থান করছিলেন।

গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কহিনুর আক্তার দুপুর ১২টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, সকালে বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে যান। সেখানে শ্রমিক ও মালিক পক্ষকে নিয়ে বসেন। শ্রমিকদের অধিকাংশ দাবিদাওয়া কিছুটা এদিক-সেদিক করে মেনে নিয়েছে কোম্পানি। সব শ্রমিকের বেতন এক হাজার টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছে। এরপরও কর্মরত শ্রমিকদের অন্য কোনো অভিযোগ, দাবিদাওয়া থাকলে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।