ক্লাস বন্ধ করে সংসদ সদস্যের সংবর্ধনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে নির্ধারিত সময়ের আগে ক্লাস বন্ধ করে পাঁচটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্থানীয় সংসদ সদস্য মু. জিয়াউর রহমানের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগদানের অভিযোগ উঠেছে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ী ফুটবল মাঠে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের পর ১ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মু. জিয়াউর রহমান। আজ বেলা সাড়ে তিনটায় তাঁকে সংবর্ধনা দেয় উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ।
বিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ করে ওই অনুষ্ঠানে যায় ইউনিয়নের পাঁচটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়গুলো হলো বোয়ালিয়া দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়, বোয়ালিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, বৈরতলা দাখিল মাদ্রাসা, ষড়গ্রাম বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কাশিয়াবাড়ী আলিম মাদ্রাসা। বিদ্যালয়গুলোতে সকাল ১০টায় ক্লাস শুরু হয়ে চলে বিকেল চারটা পর্যন্ত।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের জন্য পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি দেওয়ার বিষয়টি জানেন না বলে জানিয়েছেন সংসদ সদস্য মু. জিয়াউর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কাউকে নির্ধারিত সময়ের আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি দিতে বলিনি। তবে খুব বেশি শিক্ষার্থীকেও অনুষ্ঠানে দেখিনি। ২০০ থেকে ২২৫ জনের বেশি হবে না। তাদের উদ্দেশে ভালোভাবে লেখাপড়া করতে বলেছি। মা-বাবা, শিক্ষক ও গুরুজনদের মান্য করে চলতে বলেছি।’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে তাঁকে ক্রেস্ট দেওয়া হয় বলে তিনি জানান।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিকেল চারটার আগেই বিদ্যালয় ত্যাগ করে সংসদ সদস্যের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। ৩টা ১০ মিনিটের দিকে শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠানস্থল কাশিয়াবাড়ী ফুটবল মাঠে যেতে দেখা যায়। ওই বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা জানায়, টিফিনের পর তাদের কোনো ক্লাস হয়নি।
বোয়ালিয়া দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক ও বোয়ালিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, তাঁরা তিনটা পর্যন্ত ক্লাস নিয়েছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উন্নয়নের স্বার্থে তাঁরা সংসদ সদস্যের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এ ব্যাপারে তাঁদের কেউ জোর করেনি। নির্ধারিত সময়ের আগে ক্লাস বন্ধ করে সংবর্ধনায় যেতে পারেন কি না, জানতে চাইলে তাঁরা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
কাশিয়াবাড়ী আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিকেল চারটা পর্যন্ত আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ছিল।’ তবে পরিচয় গোপন রাখার শর্তে মাদ্রাসার এক শিক্ষক বলেন, সাড়ে তিনটার পর তাঁদের মাদ্রাসায় কেউ ছিলেন না।
ষড়গ্রাম বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর বলেন, ‘এমপি সাহেবের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের জন্য দেড়টার দিকে স্কুল ছুটি দেওয়া হয়। আমরা স্বেচ্ছায় এটা করেছি। কেউ আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়নি।’ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করেন তিনি। বৈরতলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার আবদুস সালাম বলেন, সংসদ সদস্যের অনুষ্ঠানের জন্য বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তাঁদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি দেওয়া হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাম মোহাম্মদ ওরফে ফিটু। বিদ্যালয় বন্ধ করে সংবর্ধনায় যাওয়ার ব্যাপারে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এলে আপনাদের মাথাব্যথা হয় কেন? আপনি কেন বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষককে ফোন দিয়েছেন? আপনারা আওয়ামী লীগবিরোধী। শুধু আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নিউজ করেন।’
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফেরদৌসী বেগম প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ রেখে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যাওয়ার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুর রশিদ বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ক্লাস সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এর আগে ছুটি দেওয়ার নিয়ম নেই। তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার বিষয়টি আমি জানি না।’