ব্রাহ্মণবাড়িয়া–২ আসনে উপনির্বাচন
ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে জনগণ নীরব প্রতিবাদ জানিয়েছেন: নিখোঁজ স্বতন্ত্র প্রার্থীর স্ত্রী
ভোটকেন্দ্রে অনুপস্থিতি থেকে জনগণ নীরব প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এই নির্বাচন এমনিতেই প্রশ্নবিদ্ধ। নতুন করে ইসির কাছে আবেদন জানানোর কিছুই নেই। ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়েছেন ভোটার, ভোট দিয়েছেন আরেকজন। হাতেনাতে এটি ধরার পরও যেহেতু নির্বাচন বন্ধ হয়নি বা স্থগিত হয়নি, তাই এখানে নির্বাচন মেনে নেওয়া না–নেওয়ার কিছুই নেই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার বাজার এলাকায় অবস্থিত নিজের বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আজ বুধবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে এসব কথা বলেন নিখোঁজ স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদের স্ত্রী মেহেরুননিছা মেহেরীন। আবু আসিফ আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। গত শুক্রবার বিকেল থেকেই তিনি নিখোঁজ।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বামী আবু আসিফকে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে মেহেরুননিছা মেহেরীন বলেন, এমপি নির্বাচনে এযাবৎকালে এত কম ভোট পড়েনি। কোনো কেন্দ্রে ৭টি, কোনো কেন্দ্রে ২০টি ভোট পড়েছে। এই নির্বাচন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে। যদি নির্বাচন কমিশন এখানে একটি নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করত, তাহলে একটি আমেজ থাকত। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (আশুগঞ্জ–সরাইল) আসন হতো গণতন্ত্রের অভিযাত্রা। এখানেই শুরু হতো গণতন্ত্রের অভিযাত্রা। এখানে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে।
মেহেরুননিছা মেহেরীন আরও বলেন, ‘আবু আসিফকে জনগণ ভালোবাসেন। ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে জনগণ আবু আসিফের প্রতি তাঁদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। এ কারণে আমি সরাইল ও আশুগঞ্জবাসীকে ধন্যবাদ জানাই।’
মেহেরুননিছা বলেন, ‘জনগণের স্বার্থে ও জনগণের আশা পূরণের জন্য আবু আসিফ আহমেদ প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু আবু আসিফ নিখোঁজের পর আমরা কোনো প্রচারণায় ছিলাম না। আবু আসিফের কোনো খোঁজ না পাওয়ায় আমিও আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। এ পর্যন্ত যত কার্যক্রম চলেছে, সব আমার কর্মীরাই চালিয়েছেন। এজেন্ট পাঠানোর কাজটিও তাঁরাই করেছেন। আর আমি নিজেও বাসায় নজরবন্দীর মধ্যে ছিলাম। আজ সকাল থেকে যখন শুনছিলাম ভোটকেন্দ্রে গেলেও ওনারা (আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মী) বের করে দিচ্ছেন। এজেন্টও আসেননি। কারণ, আগের রাতেই এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। এজেন্টদের পাওয়া যাচ্ছিল না। যাও দু-একজন যেতে চেয়েছিলেন, তাঁদের বের করে দিয়েছেন। এটা কী নির্বাচন, তখন আমি বুঝতে পারছিলাম। সেই কারণে আবু আসিফের স্ত্রী হিসেবে দেরি করে ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়েছিলাম। যাওয়ার পর দেখলাম, ভোটারের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে অন্যজন ভোট দিয়ে দিচ্ছিলেন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই ভোট স্থগিতের দাবি জানিয়েছিলাম। সেখানে ভোট দেওয়ার কোনো পরিস্থিতি ও সুষ্ঠু আমেজ নেই। এই অবস্থায় নিজের ভোট না দিয়ে আমি চলে এসেছি। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সন্তান হিসেবে রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে আমার আবেদন, যেভাবেই হোক আমার স্বামীকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।’
নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, এ কথা আপনি একাধিকবার বলছেন—এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে আপনি কোনো আবেদন করবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচন এমনিতেই প্রশ্নবিদ্ধ। আমার পক্ষ থেকে আর নতুন করে আবেদন জানানোর কিছুই নেই। ইতিপূর্বে নির্বাচন কমিশনে সুষ্ঠু নির্বাচনের আবেদন জানিয়েছি।’
আবু আসিফ নিজে থেকেই আত্মগোপনে থাকতে পারেন, নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তার এমন মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তিনি নিজেও জানেন এটি কতখানি সঠিক। কারণ, আমার স্বামী নিখোঁজ।’