কোটা আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ-অবরোধ, পদ্মা সেতুতে যান চলাচল ব্যাহত
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার ও সারা দেশে হতাহতের ঘটনার বিচারের দাবিতে মুন্সিগঞ্জ শহর ও লৌহজংয়ে পদ্মা সেতু উত্তর থানার সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে বিএনপির দুই নেতা ও আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। আহত হয়েছেন ১০ থেকে ১২ জন।
এ সময় পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্ত থেকে সেতুতে যান চলাচল ব্যাহত হয়। প্রায় ৪০ মিনিট পর বঙ্গবন্ধু মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েকটি কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছোড়ে পুলিশ।
আটক ব্যক্তিরা হলেন শহর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব মাহবুবুল আলম, মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান ও আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পদ্মা সেতু উত্তর থানার সামনে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে জড়ো হন। আন্দোলনকারীরা পদ্মা সেতুর উত্তর থানার সামনের সড়কে বসে পড়েন। সে সময় আধা ঘণ্টার মতো পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা-ধস্তাধস্তি হয়। পুলিশ আন্দোলনরত দুই শিক্ষার্থীকে আটক করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষার্থীরা পুলিশকে ধাওয়া দেন।
পুলিশ থানার ভেতরে গিয়ে অবস্থান নেয়। সে সময় থানা লক্ষ্য করে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। একপর্যায়ে পুলিশ থানা থেকে বের হয়ে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দুপুর ১২টার দিকে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এলে আবারও যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
মাওয়া ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) জিয়াউল হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা পদ্মা সেতু উত্তর টোল প্লাজার মুখে খানবাড়ি এলাকায় যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় ১০ থেকে ১২ মিনিট সেতুতে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়। পরে পুলিশ যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
অন্যদিকে মুন্সিগঞ্জ শহরের সুপারমার্কেট এলাকায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কোটা সংস্কার ও সারা দেশে হতাহতের বিচারের দাবিতে ব্যানার নিয়ে কয়েক শ শিক্ষার্থী জড়ো হন। এ সময় তাঁরা কোটা সংস্কার, হতাহত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনের গায়েবানা জানাজায় দাঁড়ান ২০ থেকে ৩০ জন নেতা-কর্মী। নামাজ শুরু হতেই পুলিশ সেখান থেকে শহর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব মাহবুবুল আলম ও মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমানকে আটক করে।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাঁদের মতো করে বিক্ষোভ চালিয়ে যান। একপর্যায়ে শহরের প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে শিক্ষার্থীরা বসে পড়েন। পাশের একটি মার্কেটের সামনে শহর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাত হোসাইনের নেতৃত্বে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জড়ো হন। সেখানে স্লোগান দিতে থাকেন নেতা-কর্মীরা। শিক্ষার্থীরাও পাল্টা স্লোগান দিলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ক্রিকেট খেলায় ব্যবহৃত স্টাম্প ও কাঠের ডাসা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকেন। একই সময় পুলিশও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মারধর করে। পুলিশ ও ছাত্রলীগের পিটুনি থেকে বাঁচতে দৌড়াতে গিয়ে ১০ থেকে ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হন। এ ছাড়া শহরের দোকানের দুই কর্মচারী ও স্থানীয় একটি অনলাইন টিভির সাংবাদিক কামরুল হাসানকে পিটিয়ে আহত করা হয়।
মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি শুরু হলে পাশে বিএনপির নেতা-কর্মীরাও জড়ো হন। তাঁরা গায়েবানা জানাজা শুরু করেন। পুলিশ দুই বিএনপি নেতাকে আটক করে। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিষয়ে ওসি বলেন, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালালে পুলিশ তাঁদের রক্ষা করে।
মুন্সিগঞ্জের পুলিশ সুপার আসলাম খান বলেন, পদ্মা সেতু উত্তর থানার সামনে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা বিশৃঙ্খলা করলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েকটি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ এবং শটগানের গুলি ছোড়ে। ঘটনাস্থল থেকে আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়।