সাতক্ষীরায় জামায়াত নেতাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হত্যার ১০ বছর পর মামলা
সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার সাদপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার ও কুশুলিয়া ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলামকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গুলি করে হত্যার ঘটনার ১০ বছর পর মামলা হয়েছে। নিহত আশরাফুলের শ্বশুর আব্দুল আজিজ বাদী হয়ে গত বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরার আমলি আদালতে হত্যা মামলাটি করেন।
সাতক্ষীরার তৎকালীন পুলিশ সুপার মঞ্জুরুল কবীর, সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামানসহ ৪৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি করা হয়। মামলাটি আমলে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে সাতক্ষীরা জেলা জজ আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) সিরাজুল ইসলাম জানান, রোববার মামলাটির শুনানি শেষে আদালতের বিচারক সুজাতা আমিন ওই ঘটনায় আগে কালীগঞ্জ থানায় কোনো মামলা হয়েছিল কি না, তদন্ত করে পুলিশকে ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
জামায়াত নেতা আশরাফুল ইসলাম কালীগঞ্জ উপজেলার ঠেকরা গ্রামের মৃত আহম্মদ আলী আদমের ছেলে। ২০১৪ সালের ৭ মে বাড়ি থেকে ধরে ভদ্রখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নিয়ে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন কালীগঞ্জ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম রহমান, কালীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাদপুর দাখিল মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদের সভাপতি এনামুল হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা মোজাহার হোসেন, ধলবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সজল মুখার্জি, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নাজমুল আহসান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ডি এম সিরাজুল ইসলাম, নলতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনিছুজ্জামান, যুবলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম ও শ্যামনগরের ভুরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাফরুল আলম।
মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়, রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কালীগঞ্জ উপজেলার সাদপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার ও কুশুলিয়া ইউনিয়ন জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম ২০১৪ সালে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিলেন। মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হোসেনের পরামর্শে ২০১৪ সালের ৭ মে আশরাফুল ইসলাম বাড়িতে ফিরে আসেন। আসামিদের কয়েকজন আশরাফুল ইসলামের ওপর নজরদারি করছিলেন। ওই দিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে মোটরসাইকেলে ও পুলিশ ভ্যানে করে কয়েকজন আসামি আশরাফুল ইসলামের বাড়ির ফটক ভেঙে ঘরে ঢুকে তাঁকে বাইরে নিয়ে আসেন। এ সময় আশরাফুলকে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি ও চড় মারা হয়। কালীগঞ্জ থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক নয়ন চৌধুরী তাঁর দুই চোখ কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলেন। এরপর তাঁকে মারধর করে স্থানীয় ভদ্রখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নিয়ে আসা হয়।
মামলার আরজিতে আরও বলা হয়, বিদ্যালয়ের মাঠে আনার পর তৎকালীন পুলিশ সুপার মঞ্জুরুল কবীর ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘আশরাফুল ইসলাম মৃত্যুর জন্য তৈরি হও।’ এ সময় আশরাফুল সন্তানদের মুখের দিকে চেয়ে মঞ্জুরুল কবীরের পায়ে ধরে বাঁচার জন্য আকুতি জানান। কিন্তু রক্ষা পাননি। মঞ্জুরুল কবীরের নির্দেশে পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান ও গোলাম রহমান রাত ১২টা ২৫ থেকে ১২টা ৫০ মিনিটের মধ্যে আশরাফুলের বুকে দুটি গুলি করেন। এতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে মৃত অবস্থায় তাঁকে পুলিশ ভ্যানের পেছনে করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরদিন বিকেলে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে আশরাফুলের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে আশরাফুল ইসলামসহ কয়েকজনকে আসামি করে কালীগঞ্জ থানার তৎকালীন এক উপপরিদর্শক হত্যার চেষ্টা, সরকারি কাজে বাধা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি মামলা করেন। একই বছরের ১৬ নভেম্বর পুলিশ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে।