‘আমি মহিলা মানুষ, কোথাও যাইতে পারি না। খালি কান্দি, পোলাডা আমার মইরা গেল না বাঁইচা আছে, কিছুই কইতে পারি না। আমরা র্যাবের হেডকোয়ার্টারে গেছিলাম, ওরা জিডির কপি চায়। আবার থানায় গেলে জিডি নেয় না। পোলাডার গায় অনেক জ্বর আছাল। ধইরা নেওয়ার আগে সে আট দিন জ্বরে ভুগছে। যেদিন পোলাডারে ধইরা নিয়া যায়, তার আগের দিন বাবায় আমার কাছে মাফ চাইছে। বলছে, আমি বাঁচুম না মা, আমারে মাফ দাও।’
বিলাপ করতে করতে প্রথম আলোকে এসব কথা বলছিলেন র্যাব পরিচয়ে তুলে নেওয়ার পর নিখোঁজ তরুণ রহমত উল্লাহর মা মমতাজ বেগম। রহমত উল্লাহ ঢাকার ধামরাইয়ের গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের বড়নালাই গ্রামের বাসিন্দা। গত ২৯ আগস্ট জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে বাড়ি থেকে র্যাব পরিচয়ে তাঁকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ঘটনার ৩৬ দিন পেরোলেও তাঁর কোনো খোঁজ পাননি স্বজনেরা।
মমতাজ বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘অর গায়ে যখন জ্বর আছাল, আমারও জ্বর আছাল। টাকার অভাবে ডাক্তারও দেহাইতে পারি নাই। পোলাডা কইছিল, মা ১০০ টাকার লাইগা তুমি আমারে ডাক্তারের কাছে নিতাছ না, নিজেও যাইতেছ না। যেদিন পোলাডারে ধইরা নিয়ে যায়, তার আগে আট দিন জ্বরে ভুগছে সে। যেদিন জ্বরটা একটু কমছাল, সেদিন অরে ধইরা নিয়া যায়।’
এর আগে ঘটনার ১৭ দিন পর প্রথম আলোর সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের কথা হয়। ১৫ সেপ্টেম্বর ‘র্যাব পরিচয়ে তুলে নেওয়ার পর নিখোঁজ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। ওই সময় ঘটনার বর্ণনা দিয়ে স্বজনেরা জানিয়েছিলেন, তুলে নিয়ে যাওয়ার পরদিন (৩০ আগস্ট) মানিকগঞ্জ র্যাব কার্যালয়, ধামরাই থানাসহ বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করেও রহমতের খোঁজ পাওয়া যায়নি। ধামরাই থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে থানা থেকে র্যাব কার্যালয়ে খোঁজ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ওই সময় র্যাব-৪ সিপিসি-৩ মানিকগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোহাম্মদ আরিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ওই বাড়িতে তাঁদের কোনো টিম যায়নি।
স্বজনেরা বলেন, ঘটনার দিন দিবাগত রাত ১১টার দিকে র্যাবের পোশাকের আদলে পোশাক ও সাদাপোশাকে বেশ কয়েকজনের একটি দল রহমত উল্লাহর বাড়িতে যান। দলের সদস্যরা বাড়ির মূল ফটকে কড়া নাড়লে রহমত ভয়ে ঘরের সিলিংয়ের ওপরে আশ্রয় নেন। পরে স্বজনেরা দরজা ও মূল ফটক খুলে দিলে দলের কয়েকজন সদস্য ঘরে ঢোকেন। তাঁদের মধ্যে চারজন সিলিংয়ে উঠতে চাইলে রহমত নিজ থেকেই নিচে নেমে আসেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, নিখোঁজ রহমতের বিরুদ্ধে কখনো কোনো অভিযোগ ওঠেনি। তিনি ইলেকট্রিকের কাজ শিখেছিলেন। শান্ত স্বভাবের মানুষ। কোনো মামলা-মোকদ্দমায় তাঁর নাম আছে বলে শোনা যায়নি। তবে তাঁর বড় ভাই বিভিন্ন সময়ে এলাকায় ঝামেলায় জড়িয়েছেন। কিন্তু তাঁর বড় ভাই তিন-চার মাস ধরে সৌদিপ্রবাসী।
সর্বশেষ গত ২৬ সেপ্টেম্বর পরিবারের সদস্যরা র্যাব হেডকোয়ার্টারে যান। সেখান থেকে তাঁদের থানায় জিডি করতে বলা হয়। জিডির কপি নিয়ে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। রহমতের ভাবি সাথী আক্তার বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে আমরা র্যাবের সদর দপ্তরে গেছিলাম। তারা বলছে, আপনারা জিডি করেন। আমরা বলছিলাম, থানায় জিডি তো রাখে না। তারা বলছে, “নিখোঁজ হয়ে গেছে এভাবে জিডি করেন। এভাবে জিডি করলে থানায় জিডি নিব।” র্যাবের হেডকোয়ার্টার থেকে ফিরে ওই দিনই আমরা আবার থানায় যাই। কিন্তু ওই দিনও জিডি নেয় নাই।’
জানতে চাইলে ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওনারা যে থানায় এসেছিলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। ওনাদের আইনি সব সহযোগিতা করা হবে। ওনারা এলে আমরা অবশ্যই জিডি নেব।’