কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) উপনির্বাচনে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর বক্তব্য নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। গত নির্বাচনে ‘পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি পোড়ানোর স্বীকারোক্তি’ দিয়ে মুজিবুর রহমান নামের ওই প্রার্থী ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের। মুজিবুর বৌলাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
২৭ জুলাই বৌলাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এখানে মুজিবুর রহমান ছাড়াও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বুরহান উদ্দিন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মোশাররফ হোসেন ও ইসলামী আন্দোলনের আমিন শহীদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ইউপি চেয়ারম্যান আওলাদ হোসেন গত ৭ জানুয়ারি পদত্যাগ করে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় পদটি শূন্য হয়।
গত শনিবার (৬ জুলাই) ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ কুঁড়েরপাড় এলাকায় এক নির্বাচনী পথসভায় বক্তব্য দেন মুজিবুর রহমান। ওই সভার ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা গেছে, ‘বিগত সময়ের (ইউপি) নির্বাচনে আমার কেন্দ্রের ভোট লুট হয়েছিল। তা প্রতিহত করতে চারজন পুলিশকে আমরা আহত করেছিলাম। ৭০টি গুলি রেখেছিলাম। দু-তিনটি গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিলাম। এরপরও তো আমি পিছপা হইনি। হুমকি-ধমকি ভয় পাওয়ার লোক আমি নই। ছাত্রলীগ থেকে রাজনীতি করে আমি এ পর্যন্ত এসেছি। গতবারও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করেছিলাম। এবারও উপনির্বাচনে আমি প্রার্থী হয়েছি।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি নিয়ে স্থানীয় অনেক নেতা-কর্মী ও ভোটারদের মধ্যে হইচই পড়ে গেছে। প্রার্থীদের কেউ কেউ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর যে বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে, এতে তিনি কোনো খারাপ কথা বলেননি। যা সত্যি, তা–ই বলেছেন। গত নির্বাচনে এ ঘটনা নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল। এ মামলার ১ নম্বর আসামিও তিনি। মামলাটি চলমান। সেই কথাই জনগণকে স্মরণ করিয়ে দিতে তিনি এসব বলেছেন। মুজিবুর আরও বলেন, তাঁর বক্তব্যের আগে-পিছে কী বলা হয়েছিল, সেগুলো কেটে শুধু একটি অংশ ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী পথসভায় যে বক্তব্য দিয়েছেন, এতে জনমনে আতঙ্ক ছড়ানোর মতো কিছু নেই।
ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি নির্বাচনের প্রার্থী বুরহান উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের প্রতিপক্ষ যে হুমকিস্বরূপ বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন, তাতে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। আমি যেখানেই ভোট চাইতে যাই, ভোটাররা জানান, মুজিবুরের বক্তব্যের কারণে তাঁরা আতঙ্কে রয়েছেন। তাঁরা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন কি না, এ নিয়ে সন্ধিহান।’
এ বিষয়ে আরেক প্রার্থী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী যে বক্তব্য দিয়েছেন, এতে আমার বৌলাই ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। আমি নিজেও আমার নিরাপত্তা নিয়ে ভাবছি। আমি চাই, প্রশাসন যাতে এ বিষয়ে অচিরেই ব্যবস্থা নেয়।’
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ প্রথম আলোকে বলেন, বক্তব্যটি শুনেছেন। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজিবুরের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। তিনি এসে এ বিষয়ে যদি সঠিক কোনো ব্যাখ্যা না দিতে পারেন এবং আইনের ব্যত্যয় হয়, এমন কিছু বলে থাকলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।