সিঙ্গাইরে গোয়ালঘরের মাটি খুঁড়ে মিলল লুট হওয়া ৪৮ ভরি সোনা
র্যাব সদস্য পরিচয়ে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলায় এক সোনা ব্যবসায়ীর লুট করা ৪৮ ভরি সোনা এক আসামির বাড়ির গোয়ালঘরের মেঝের মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় রাজবাড়ী সদর উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে এক আসামির বাড়ির গোয়ালঘর থেকে এ সোনা উদ্ধার করা হয়।
এর আগে এ ঘটনায় দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে ওই ব্যবসায়ীর লুট হওয়া আরও ৪৭ ভরি সোনা এখনো উদ্ধার হয়নি। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান সংবাদ সম্মেলনে আসামিদের গ্রেপ্তার ও সোনা উদ্ধারের বিষয়ে বিস্তারিত জানান।
গ্রেপ্তার দুই আসামি হলেন ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার রঘুনাথপুর গ্রামের সিদ্দিক শেখ (৫০) এবং রাজবাড়ী সদর উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের শাহ আলম মিয়া (৪৮)।
সিঙ্গাইর থানা–পুলিশ এবং এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার দোহারের পূর্ব লটাখোলা গ্রামের সুমন হালদারের দোহারের জয়পাড়া বাজারে নির্ঝর অলংকার নিকেতন নামে একটি জুয়েলারি দোকান রয়েছে। তিনি ছালিমাটি থেকে সোনা বের করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন। ১ জুন সকালে দোকানের দুই কর্মচারী নিয়ে পূর্ব লটাখেলা গ্রামের বাড়ি থেকে সুমন একটি প্লাস্টিকের ব্যাগে করে ৯৫ ভরি স্বর্ণালংকার ও সোনার পাত নিয়ে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশায় করে সিঙ্গাইরের চারিগ্রাম বাজারে সোনা ব্যবসায়ী আবুল হোসেনের কাছে বিক্রির জন্য যাচ্ছিলেন।
সকাল সাতটার দিকে সিঙ্গাইরের জামশা আমতলা এলাকায় তাঁদের বহনকারী অটোরিকশাটি পৌঁছালে সাত থেকে আটজন ডাকাত সদস্য নিজেদের র্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে তাঁদের অটোরিকশার গতি রোধ করেন। এরপর তাঁদের মারধর করে সুমনের কাছ থেকে সোনার ব্যাগটি ছিনিয়ে নেন। পরে তাঁদের হাত, পা ও চোখ বেঁধে টেনেহিঁচড়ে একটি হাইয়েস গাড়িতে তোলেন। এরপর তিনজন ডাকাত সদস্য তাঁদেরসহ গাড়িটি নিয়ে সিঙ্গাইরের দিকে রওনা হন। আর দুটি মোটরসাইকেলে করে চার থেকে পাঁচজন ডাকাত সোনার ব্যাগটি নিয়ে অন্যত্র চলে যান।
এরপর হাইয়েস গাড়িটি জামশা বাজারে গিয়ে যানজটে পড়লে স্থানীয় লোকজন আটক করেন। এরপর সোনা ব্যবসায়ী সুমনসহ তিনজনকে গাড়ি থেকে উদ্ধার করেন এবং তিন ডাকাত সদস্যকে গণপিটুনি দেন স্থানীয় লোকজন। এদিকে সিঙ্গাইরের গোলাইডাঙ্গা বাজারের লোকজন মোটরসাইকেলে থাকা একজনকে আটক করেন স্থানীয় লোকজন। গণপিটুনির শিকার চার ডাকাত সদস্যকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় ওই দিন দিবাগত রাতে ভুক্তভোগী সোনা ব্যবসায়ী সুমন হালদার বাদী হয়ে ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও দুই থেকে তিনজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। মামলায় এক সেনাসদস্যকে আসামি করা হয়। তিনি র্যাব-১–এ কর্মরত ছিলেন। সেনাসদস্য হওয়ায় আসামিকে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। সামরিক আদালতে তাঁর বিচার হবে বলে জানান সিঙ্গাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল ইসলাম।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিঙ্গাইর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মনোহর আলী বলেন, গ্রেপ্তার তিন আসামি ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার মেগচামী গ্রামের সম্রাট মৃধা (২৮), নগরকান্দা উপজেলার রাধানগর পূর্বপাড়া গ্রামের মিরাজুল শেখ (২৮) এবং পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার পাটেশ্বর গ্রামের এ কে আমিজ উদ্দিন (৫২) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁরা বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
আজ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত বুধবার দুপুরে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের কুচিয়ামোড়া টোল প্লাজা এলাকা থেকে আসামি সিদ্দিক শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাঁর দেওয়া তথ্যমতে বুধবার বিকেলে রাজবাড়ীর শ্রীপুর গ্রাম থেকে আসামি শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর শাহ আলমের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাঁর বাড়ির গোয়ালঘরের মেঝের মাটি খুঁড়ে লুট হওয়া সোনার ৪৮ ভরি উদ্ধার করা হয়।
এ ব্যাপারে সিঙ্গাইর থানার ওসি জিয়াউল ইসলাম বলেন, বাকি সোনাগুলো পলাতক অন্য আসামিদের কাছে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার ওই দুই আসামিকে আজ বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত এ মামলায় ছয় আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।