তীব্র শীতে মতলব দক্ষিণে ১০ দিনে দেড় শতাধিক শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত

নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুকে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন এক নার্স। আজ শুক্রবার দুপুরে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু ওয়ার্ডেছবি: প্রথম আলো

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় কয়েক দিনের তীব্র শীতে অনেক শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। ২০ ডিসেম্বর থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১০ দিনে দেড় শতাধিক শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আক্রান্ত শিশুদের অধিকাংশই শূন্য থেকে পাঁচ বছর বয়সী। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকায় তীব্র শীতে এত শিশু এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ দিনে হাসপাতালের অন্ত ও বহির্বিভাগে নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে মোট চিকিৎসা নিয়েছে ১৬০ শিশু। তাদের ৮০ শতাংশের বয়স শূন্য থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে। সেখানে প্রতিদিন গড়ে চিকিৎসা নিয়েছে ১৬ শিশু। এ সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের পাঁচ গুণের বেশি। বছরের অন্যান্য সময়ে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন গড়ে চিকিৎসা নেয় চার থেকে পাঁচজন।

চিকিৎসকেরা জানান, গত ১০ দিনে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ৮০ জন। প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হয়েছে ৮ শিশু। আজ শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সেখানে ভর্তি হয়েছে ৪ শিশু।

আজ দুপুর ১২টার দিকে ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার প্রতিটি বেডে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু। চিকিৎসক ও নার্সরা তাদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। কিছু শিশুকে নেবুলাইজেশন (নিশ্বাসর মাধ্যমে নেওয়া ওষুধ) দেওয়া হচ্ছে। কিছু শিশুকে খাওয়ানো হচ্ছে ওষুধ। আক্রান্ত শিশুদের যত্নআত্তি করছেন তাদের মায়েরাও।

উপজেলার উত্তর পিংড়া গ্রামের গৃহবধূ আয়েশা বেগম বলেন, ‘বুকে ঠান্ডা লাইগা আমার দেড় মাসের মাইয়া নাবিলা আক্তারের শ্বাসকষ্ট বাইড়া গেছিল। নিউমোনিয়া অওনে বাচ্চাডা দম ফালাইতে পারছিল না। সাত দিন আগে এনো ভর্তি করাইছি। চিকিৎসকেরা নাকে গ্যাস (নেবুলাইজেশন) দিছেন। অ্যান্টিবায়োটিকও খাওয়াইছেন। বাচ্চাডার অবস্থা এখন ভালার দিকে।’

ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ নার্স হুরে জান্নাতি বলেন, শীত বাড়ার পর থেকে প্রতিদিন এখানে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুরা ভর্তি হচ্ছে। তাদের চিকিৎসাসেবায় ব্যস্ততা বেড়েছে হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের। শ্বাসকষ্ট বেশি থাকলে ওই শিশুদের নেবুলাইজেশন দেওয়া হচ্ছে। সাত থেকে আট দিনে শিশুরা এই রোগ থেকে সেরে ওঠে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ রাজিব কিশোর বণিক প্রথম আলোকে বলেন, শিশুদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকে। শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুরাও বেশি হারে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। মায়েদের যত্নের অভাবে ঠান্ডা লেগে অনেক শিশু এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রান্ত শিশুদের শ্বাসকষ্ট কমাতে নেবুলাইজেশন দেওয়া হচ্ছে। সঙ্গে অ্যান্টিহিস্টামিন ও অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ঠান্ডা লেগে বুক ধড় পড় করলে এবং শ্বাসকষ্ট হলে দেরি না করে শিশুদের নিকটস্থ হাসপাতালে আনতে হবে। শিশুদের যথাযথ যত্ন নিলে, কুসুম গরম পানিতে গোসল করালে এবং শীতে শিশুদের শীতবস্ত্র পরিয়ে শরীর গরম রাখলে এ রোগ এড়ানো সম্ভব।