বিকল্প কাঠের সেতুর খুঁটি দেবে গেছে, ঝুঁকি নিয়ে চলাচল

জয়পুরহাটের পাঁচবিবির বড় মানিক এলাকায় ছোট যমুনা নদীর ওপর কাঠের বিকল্প সেতুটি বেঁকে গেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরেছবি: প্রথম আলো

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার বড় মানিক এলাকায় ছোট যমুনা নদীর ওপর একটি নতুন গার্ডার সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। আগের পুরোনো সেতুটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এর পাশেই নদী পারাপারের জন্য দুই লেনের কাঠের বিকল্প সেতু নির্মাণ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

প্রায় ৯ মাস আগে তৈরি করা ওই কাঠের সেতুর খুঁটি দেবে গিয়ে এর মাঝখানের পাটাতন বেঁকে হেলে পড়েছে। ওই কাঠের সেতু দিয়ে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মাইকিং করে কাঠের সেতু দিয়ে রিকশা-ভ্যান চলাচল নিষেধ করা হচ্ছে। কাঠের সেতু ছাড়া নদী পারাপারে আর কোনো  বিকল্প ব্যবস্থাও নেই। ফলে লোকজন ঝুঁকি নিয়ে কাঠের সেতু দিয়ে পারাপার হচ্ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুরোনো সেতু ভেঙে চলাচলের জন্য পাশে বেইলি সেতু নির্মাণ করার দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু কাঠের সেতু করা হয়েছে। সেই কাঠের সেতুও নিম্নমানের। শুরু থেকেই রিকশা-ভ্যান উঠলেই কাঠের সেতুটি কাঁপত; এখন খুঁটি দেবে গিয়ে হেলে পড়েছে। নতুন সেতু নির্মাণের নির্ধারিত সময় দেড় বছরের মধ্যে অর্ধেক পার হয়েছে। নির্মাণকাজে অগ্রগতি কম। নির্ধারিত সময়ে নতুন সেতু নির্মিত হবে না বলে আশঙ্কা তাঁদের।

এ বিষয়ে জানতে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পাঁচবিবি উপজেলা প্রকৌশলীর অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সামিন শারারের (ফুয়াদ) কার্যালয় গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে উপসহকারী প্রকৌশলী প্রকৌশলী সঞ্জিত চন্দ্র চৌধুরী বলেন, ‘নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় কাঠের সেতুটি দেবে গেছে। এ কারণে চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। বেইলি সেতু নির্মাণের জন্য বরাদ্দ ছিল কি না, সে বিষয়ে এলাকার লোকজন আমাদের প্রশ্ন করেন। প্রকৃতপক্ষে বেইলি নয়, কাঠের সেতুর বরাদ্দ ধরা ছিল। বরাদ্দের বাইরে ঠিকাদার কাজ করতে পারবেন না।’

গতকাল দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, নদীর পূর্ব দিকে হ্যান্ডমাইকে কাঠের সেতু দিয়ে সব ধরনের রিকশা-ভ্যান চলাচলে নিষেধ করা হচ্ছে। কাঠের সেতুর দুই পাশের মুখে চালকেরা যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছেন। তাঁরা খালি রিকশা-ভ্যান কাঠের সেতু দিয়ে পার করছেন। আর লোকজন হেঁটে পার হচ্ছেন।

সেতুর খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ইউক্যালিপটাসগাছ। সেতুর মাঝখানে খুঁটি দেবে গিয়ে এক পাশে বেঁকে সেতু নিচে দেবে গেছে। ঠিকাদারের লোকজন সেতু মেরামতের কাজ করছেন।

পাঁচবিবি উপজেলার বড় মানিক এলাকায় ছোট যমুনা নদীর ওপর ৯০ দশমিক ৬ মিটার দীর্ঘ গার্ডার সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি সেতুটির নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। কার্যাদেশ অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৮ জুলাই। চুক্তিমূল্য ৮ কোটি ৫৭ লাখ ১১ হাজার ৭৭২ টাকা।

নদীর পূর্ব পাশে টাঙানো একটি সাইনবোর্ডে নির্মাণাধীন সেতু–সম্পর্কিত তথ্য দেওয়া হয়েছে। তবে এতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানার ছকে কোনো তথ্য নেই। ওই সাইনবোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কাজটি বাস্তবায়ন করছে। প্রোগ্রাম ফর সাপোর্টিং রুরাল ব্রিজেজ কর্মসূচির আওতায় পাঁচবিবি উপজেলার বড় মানিক এলাকায় ছোট যমুনা নদীর ওপর ৯০ দশমিক ৬ মিটার দীর্ঘ গার্ডার সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি সেতুটির নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। কার্যাদেশ অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৮ জুলাই। চুক্তিমূল্য ৮ কোটি ৫৭ লাখ ১১ হাজার ৭৭২ টাকা।

সেতু নির্মাণকাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা পাঁচবিবি এলজিইডির উপসহকারী সঞ্জিত চৌধুরী বলেন, ছোট যমুনা নদীর বড় মানিক গার্ডার সেতু নির্মাণের কাজ জয়েন্ট ভেঞ্চারে যশোরের ঠিকাদারের নাম রয়েছে। তবে জয়পুরহাটের মাসুদ রেজা নামের একজন এ সেতুর নির্মাণের কাজ করছেন।

ছোট যমুনা নদীর তীব্র স্রোতের মধ্যে গাছের গুঁড়ি, বর্জ্য, পলিথিন, কচুরিপানা প্রভৃতি সেতুর খুঁটিতে ধাক্কা দেওয়ায় এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার তোলা
ছবি: প্রথম আলো

মাসুদ রেজা রেজা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের পদে আছেন। তিনি সাবেক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের ঘনিষ্ঠ। জেলার এলজিইডির বড় বড় কাজ তিনি করেন। গত ৫ আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মাসুদ রেজা বড় মানিক সেতু নির্মাণের সাইটে আসছেন না। তাঁর লোকজন নির্মাণকাজ দেখভাল করছেন।

বড় মানিক সেতু নির্মাণের সাইট দেখভাল করছেন পলাশ নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ নদীর পানি বাড়ায় তীব্র স্রোতের মধ্যে গাছের গুঁড়ি, বর্জ্য পলিথিন, কচুরিপানা প্রভৃতি সেতুর খুঁটিতে ধাক্কা দেওয়ায় এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ জন্য মানুষ চলাচলে একটু বিঘ্ন হচ্ছে। দুর্ঘটনা এড়াতে মাইকিং করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে আমরা সংস্কারকাজ শুরু করেছি। পানি বেশি থাকার কারণে কাজ দ্রুত করা যাচ্ছে না।’

ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক আফাজ উদ্দিন বলেন, ‘পুরোনো সেতু ভেঙে লোহার বেইলি সেতু করার কথা বলা হয়েছিল। বেইলি সেতুর টাকা মেরে দিয়ে কাঠের সেতু করা হয়েছে। এখন কাঠের সেতুর নড়বড়ে অবস্থা। মাইকিং করে করে আমাদের কাঠের সেতু দিয়ে চলাচল না করতে নিষেধ করছে।’

কড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা ফজলুর করিম বলেন, ‘৯ মাস আগে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত এক পাশে পিলার হয়েছে। বিকল্প কাঠের সেতুর অবস্থাও খারাপ, যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। আমরা চলাচলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফা সুলতানা বলেন, ‘ছোট যমুনা নদীর বড় মানিক এলাকায় বিকল্প কাঠের সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষয়টি জানার পর এলজিইডির সঙ্গে কথা বলেছি। প্রকৌশলী কাঠের সেতু পরিদর্শন করেছেন। ওই পথে অনেক মানুষ চলাচল করে। দ্রুত কাঠের সেতুটি ঠিকঠাক করতে বলেছি।’