জাতীয় পার্টির ভরাডুবি নিয়ে নানা আলোচনা

প্রচার কার্যক্রমের শুরু থেকে জাতীয় পার্টি সুবিধা করতে পারছিল না। ইশতেহার ঘোষণার সময় দলের নেতা-কর্মীরা হট্টগোলে জড়িয়ে পড়েন। 

জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জাতীয় পার্টির ভরাডুবি হয়েছে। এই নির্বাচনের চারজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রার্থী চতুর্থ হয়েছেন। সাংগঠনিক দুর্বলতা, সঠিকভাবে প্রচার না চালানো এবং দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনের বাইরে থাকায় জাতীয় পার্টির নির্বাচনের ফলাফলে বিপর্যয় হয়েছে বলে দলীয় নেতা–কর্মীরা ধারণা করছেন। 

তবে ফলাফল ঘোষণার এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এ ভোট নিয়ে কাউকে কিছু বলার নেই। কোনো মন্তব্য নেই। আগামী পরশু সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকায় চলে যাব।’ তিনি ইভিএমে ভোট পড়ার গতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। 

সিটি নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বুধবার রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হয়। এতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী পেয়েছেন ১০ হাজার ২৭২ ভোট। বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের পর ১২ জুন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মুরশিদ আলম রাজশাহীর ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন এবং প্রচার-প্রচারণাও বন্ধ করে দেন। তার পরও তিনি পেয়েছেন ১৩ হাজার ৪৮৩ ভোট। তার অবস্থান দ্বিতীয়। আর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন জাকের পার্টির প্রার্থী লতিফ আনোয়ার। তিনি পেয়েছেন ১১ হাজার ৭১৩ ভোট। নৌকার প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ১ লাখ ৬০ হাজার ২৯০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। 

ভোটের এই ফলাফল নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম সন্তুষ্ট নন। তিনি স্বীকার করেছেন তাঁদের সাংগঠনিক দুর্বলতাও রয়েছে। তবে এই ফলাফল তাঁর নয়। তিনি দাবি করেন, তাঁর নিজের কেন্দ্র যেখানে তিনি ভোট দিয়েছেন সেখানে তাঁর ৮ থেকে ১০ হাজার ভোট রয়েছে। সেই ভোট কারও নেওয়ার ক্ষমতা নেই। সেই ভোট কোথায় গেল? তিনি ওই কেন্দ্র থেকে চলে আসার পরই সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গিয়েছেন। তিনি বলেন, ইভিএমে ১ ঘণ্টায় ১৩ থেকে ১৫টা ভোট হয়েছে। একজন ভোটার সকাল আটটায় ভোট কেন্দ্রে ঢুকে বেলা আড়াইটায় বের হয়েছেন। মানুষের ইভিএমএ ভোট দিতে গিয়ে এই অভিজ্ঞতা হয়েছে। 

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার শুরু থেকে তিনি সুবিধা করতে পারছিলেন না। ইশতেহার ঘোষণার সময় দলীয় নেতা–কর্মীরা হট্টগোলে জড়িয়ে পড়েন।

এ সময় ক্ষোভে প্রার্থী সাইফুল ইসলাম তাঁর নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে বলতে থাকেন, তাঁর কোনো দল নেই।এসব ঘটনায় তিনি একাধিকবার ক্ষমাও চেয়েছেন। এই অবস্থায় জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির একটি কার্যালয় থেকে তাঁর নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন। তিনি কোনো নির্বাচনী ক্যাম্প করেননি। মাত্র চারটি মাইকে তাঁর নির্বাচনী প্রচার চলছিল। নগরের খুবই কম জায়গায় তাঁর পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। 

রাজশাহী সিটি নির্বাচনের দলীয় প্রার্থীর ফলাফল এত খারাপ হওয়ার কারণ জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির রাজশাহী মহানগরের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সালাউদ্দিন বলেন, দলের ইজ্জত রাখার জন্য শুধু তাঁরা নির্বাচনে গেছেন। নগরের সব সাংগঠনিক ওয়ার্ড কমিটিও করা হয়নি। তাঁদের সমর্থক অনেক আছে কিন্তু তাঁদের দুয়ার পর্যন্ত তাঁরা পৌঁছাতে পারেননি। আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী আওয়ামী লীগের দুর্নীতির বিষয়টিও তুলে ধরতে পারেননি। এসব কারণে জাতীয় পার্টির ভরাডুবি হয়েছে।