নন্দীগ্রামে হিরো আলমের নির্বাচনী প্রচারণায় হামলার অভিযোগ
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের বাংলাদেশ কংগ্রেস মনোনীত প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমের (ডাব প্রতীক) নির্বাচনী প্রচারণায় হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ শনিবার সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে নন্দীগ্রাম উপজেলার মুরাদপুর বাজারে এ হামলার ঘটনা ঘটে। নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকেরা এ হামলা করেছেন বলে হিরো আলম অভিযোগ করেছেন।
হিরো আলম বলেন, বিকেলে ১৪-১৫ জন কর্মী-সমর্থক নিয়ে তিনি নন্দীগ্রামের মুরাদপুর বাজারে ডাব প্রতীকের প্রচারণা ও গণসংযোগ চালাতে যান। এ সময় নৌকার সমর্থকেরা হিরো আলমের প্রচারণায় বাধা দেন। এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা হলে সাদেক নূর ও জাহিদ হাসানের নেতৃত্বে নৌকার সমর্থকেরা তাঁর ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালান। এ সময় নৌকার সমর্থকেরা ডাব প্রতীকের একজন কর্মীর মুঠোফোন কেড়ে নেন। হিরো আলম দাবি করেন, হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মী।
এ ব্যাপারে নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নন্দীগ্রাম পৌরসভার মেয়র আনিসুর রহমান বলেন, জাহিদ ও সাদেক নূর নৌকার কর্মী, তবে আওয়ামী লীগের কেউ নন। তাঁরা জাসদের লোক। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকে জাসদের প্রার্থী রেজাউল করিমকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের চেয়ে এখন তাঁর লোকজনের দাপটই বেশি। দলীয় নেতা-কর্মীদের আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগ নিজেদের মতো করে নৌকার প্রচারণা চালাচ্ছে। জাসদের কেউ আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ওপর হামলা করলে কিংবা প্রচারণায় বাধা প্রদান করলে তার দায় দল নেবে না। হামলাকারী চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব প্রশাসনের।
গত বৃহস্পতিবার প্রচারণা শুরুর আগে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তীর সঙ্গে দেখা করেন হিরো আলম। এ সময় কাহালু-নন্দীগ্রামে প্রচারণার সময় যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে পুলিশ যেন সহযোগিতা করে, এ জন্য সহযোগিতা চান।
জানতে চাইলে নন্দীগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজমগীর হোসেন বলেন, ‘হিরো আলমের ওপর হামলার অভিযোগ পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিক তদন্তে হামলার সত্যতা মেলেনি। ডাব প্রতীকের কোনো কর্মীর কাছ থেকে মুঠোফোন কেড়ে নেওয়ারও সত্যতা মেলেনি। হিরো আলম নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে নন্দীগ্রামে আসছেন, সেই তথ্য আগে থেকে থানা-পুলিশকেও জানাননি।’ ওসির দাবি, হিরো আলম নির্বাচনী ‘কাভারেজ’ পাওয়ার জন্য হামলার মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন।
এর আগে বগুড়া-৪ আসনের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন হিরো আলম। কিন্তু তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। হলফনামাসহ আনুষঙ্গিক কাগজপত্রে স্বাক্ষর না করাসহ নানা ত্রুটির কারণে ৩ ডিসেম্বর যাচাই–বাছাই শেষে হিরো আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরে নির্বাচন কমিশনে আপিল করে তিনি প্রার্থিতা ফিরে পান। এর তিন দিনের মাথায় ফেসবুকে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন হিরো আলম। কিন্তু বৃহস্পতিবার বগুড়ার পুলিশ সুপারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভোটারদের অনুরোধে নির্বাচনের মাঠে থেকে গেলাম। অনেকে মনে করেছেন, হিরো আলম টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। টাকা খেয়ে ভোটের মাঠ থেকে সরে যাচ্ছে। এসব ধারণা ভেঙে দেওয়ার জন্যই নির্বাচনের মাঠে আছি।’
চলতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি বগুড়া-৪ (কাহালু ও নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী (একতারা প্রতীক) হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন হিরো আলম। এর মধ্যে বগুড়া-৪ আসনে ১৪-দলীয় জোটের শরিক জাসদের এ কে এম রেজাউল করিমের কাছে ৮৩৪ ভোটে হেরে যান। এরপর ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।