শীতের সকালে উষ্ণতা ভাগাভাগি

শীতের সকালে একই বিছানায় উষ্ণতা ভাগাভাগি করছেন একজন ছিন্নমূল মানুষ। আজ শুক্রবার সকালে রাজশাহী নগরের পদ্মার ধারে দরগাপাড়া মহল্লায়ছবি: প্রথম আলো

আজ শুক্রবার সকাল ৯টা। তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা শতভাগ। সূর্য ওঠেনি। হালকা কুয়াশা। এরই মধ্যে রাজশাহী নগরের পদ্মা নদীর ধারে একটি গাছের নিচে ছিন্নমূল এক মানুষের সংসার। গাছটাই যেন তাঁর ঘর। কম্বল মুড়ি দিয়ে সেখানেই রাতে ঘুমান। তবে তাঁর সংসারের সঙ্গী হয়েছে একটি কুকুর ও সেটির পাঁচটি বাচ্চা। একই কম্বলে তারা শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।

মানুষটির হাতে–পায়ে ঘা। ডান পা কাপড় দিয়ে প্যাঁচানো। অনেক চেষ্টা করে লোকটির মুখ থেকে দু–একটি কথা স্পষ্ট বের করা গেল। তাঁর নাম ফারুক। চালকলে কাজ করতেন। সেই সময় পা ভেঙে যায়। বাড়িঘর বা সংসার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বিড়বিড় করে যা বললেন, তা বোঝা গেল না। মনে হলো লোকটি মানসিকভাবে সুস্থ নন অথবা ইচ্ছা করেই বলতে চান না।

ছবি তুলতে চাইলে তিনি কোনো কথা বললেন না। তবে মা কুকুরটি খেঁকিয়ে উঠল। কুকুরটিকে অভয় দেওয়ার জন্য ছবি তোলার আগে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হলো। তারপর হয়তো কুকুরটি বুঝল তাদের কোনো ঝামেলা হবে না। তখন সে মাথা নামাল। ফারুকের কম্বলের মধ্যে জড়িয়েও বাচ্চাগুলো কাঁপছিল। একটি ঘাড়ে নিচ দিয়ে আরেকটি মাথা ঢুকিয়ে জড়াজড়ি করে রয়েছে।

পরিবারের কেউ না থাকলেও কুকুরগুলো সঙ্গ দিচ্ছে ফারুককে
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, রাজশাহীতে আজ সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে সকাল ৬টায় তাপমাত্রা ছিল ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বেলা বাড়লেও রোদ না ওঠার কারণে তাপমাত্রা আরও নিচে নেমে এসে ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রিতে দাঁড়িয়েছে। রহিদুল ইসলাম বলেন, রাজশাহীতে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। এক সপ্তাহ ধরে আবহাওয়া এ রকমই রয়েছে। এর মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রির একটু ওপরে ছিল। দুপুরে পরে রোদ পড়ে যাওয়ার কারণে ঠান্ডা বেশি অনুভূত হয়েছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত তাপমাত্রা এরকমই থাকতে পারে বলে তিনি জানান।

গাছতলায় ছিন্নমূল মানুষটির সংসারের তৈজসপত্র বলতে দেখা গেল দুই পাশে দুটি থালা। একটিতে বোধহয় তিনি খাওয়াদাওয়া করেন, আরেকটি সামনে পাতা থাকে। আর পাশে পড়ে রয়েছে একজোড়া ক্র্যাচ। বোঝা গেল, তিনি তাতে ভর দিয়ে চলাফেরা করেন। মনে হলো পরিবারের কেউ না থাকলেও শয্যাসঙ্গী কুকুরগুলো তাকে সঙ্গ দিচ্ছে।