ময়মনসিংহে ঝুট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে যুবদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ২০

সংঘর্ষে ভাঙচুর ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ১৩টি মোটরসাইকেল। আজ শনিবার দুপুরে ময়মনসিংহের ভালুকায়ছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহের ভালুকায় ঝুট ব্যবসায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যুবদলের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুই পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে ভাঙচুর ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ১৩টি মোটরসাইকেল। খবর পেয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন। আজ শনিবার বেলা দেড়টার দিকে উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের জামিদিয়া মায়ের মসজিদ এলাকার রাইদা কালেকশন কারখানার সামনে এ ঘটনা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এলাকাটিতে থাকা রাইদা কালেকশন নামের তৈরি পোশাক কারখানাটির ঝুট ব্যবসা ছিল সাইফুল ইসলামের নিয়ন্ত্রণে। ১৫ বছর ধরেই এ কারখানায় ঝুট ব্যবসা তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন। সাইফুল যুবলীগের স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে দাবি করেছেন তাঁর প্রতিপক্ষের লোকজন। সাইফুল জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও ভালুকা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের ভাগনে।

সরকার পতনের পর হবিরবাড়ি ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান ও সহসভাপতি মজিবর মণ্ডলের পক্ষ সাইফুল ইসলামের সেই ব্যবসা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেন। কিন্তু তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ান স্থানীয় যুবদল কর্মী মো. শামীম আহমেদ ও তাঁর লোকজন। শনিবার জিয়াউর রহমানের পক্ষ কারখানা থেকে মালামাল বের করতে গেলে বাধা দেন শামীমের লোকজন। ওই সময় দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীসহ অন্তত আটজন আহত হলে তাঁদের ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়।

আহত ব্যক্তিরা হলেন জুয়েল ঢালী (৩২), মো. মোবারক (৩০), মো. জুনায়েদ (২৮), মো. রফিকুল (৩০), মো. মজিবুর রহমান (৫০), মো. আনোয়ার (৩০), মো. শাহিন আলম (৪৫) ও মো. ফারুক (২৮)। তবে দুই পক্ষ থেকেই ১০ জন করে আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ও ময়মনসিংহ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বলে জানানো হয়েছে। এ সময় শামীম গ্রুপের ১৩টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে সাইফুলের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে হবিরবাড়ি ইউনিয়ন যুবদলের সম্পাদক জিয়াউর বলেন, সাইফুল ১৫ বছর ধরে কারখানাটিতে ঝুট ব্যবসা করেন। সাইফুল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন, তাঁর আত্মীয় হয় এবং তাঁর (সাইফুলের) নামে বিএনপি হিসেবে মামলাও রয়েছে। সাইফুলের নামেই কার্যাদেশ, এখন তাঁর নামের সঙ্গে আওয়ামী লীগের তকমা লাগানো হচ্ছে।

ইউনিয়ন যুবদল নেতা শামীম বলেন, ‘যুবলীগ নেতা ও আওয়ামী সন্ত্রাসী সাইফুলের সঙ্গে মিলে স্থানীয় বিএনপির নিবেদিত কর্মীদের উপেক্ষা করে জিয়াউর ও মজিবর জোর করে মাল বের করে নেওয়ার সময় আমাদের ওপর হামলা করে। সাইফুল যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত, তার অনেক ছবি রয়েছে আমার কাছে। গত ২৮ অক্টোবরের আগে জিয়াউর আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে চলেছে। স্থানীয় জমিদাতা ও বিএনপি নেতারা চাচ্ছিল ঝুট ব্যবসায়াটি তারা করবে। সে কারণে সবাই মিলে সাইফুলের মালামাল নিতে বাধা দেয়। এ সময় এলাকার মানুষের ওপর চারদিক থেকে হামলা করে। এতে আমাদের অন্তত ১০ জন আহত হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’

ভালুকার ঘটনাটি দলের জন্য বিব্রতকর জানিয়ে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর মাহমুদ বলেন, ‘ঘটনাটিকে সমর্থনের প্রশ্নই আসে না। দুই পক্ষ প্রকাশ্যে সংঘর্ষে জড়িয়েছে, অনেকে আহতও হয়েছে। আমরা ঘটনাটি দলীয়ভাবে তদন্ত করছি। দলীয়ভাবে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি আইনগতভাবেও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’