বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল থেকে সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানের ছবি অপসারণ
উচ্চ আদালতের নির্দেশে সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে সরকারি অর্থায়নে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল থেকে সংসদ সদস্য ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ছবি অপসারণ করা হয়েছে। আজ বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে এ কাজ শুরু করে মধ্যনগর ও ধর্মপাশা উপজেলা প্রশাসন। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে এ কাজ শেষ হয়।
বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের মূল নকশা পরিবর্তন করে বিধিবহির্ভূতভাবে সেই ম্যুরালে সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা-জামালগঞ্জ-তাহিরপুর) আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে রতন ও তাঁর আপন ছোট ভাই ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন ওরফে রোকনের ছবি যুক্ত করা হয়। গত ২৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল থেকে ওই দুই ছবি অপসারণের জন্য উচ্চ আদালতে একটি রিট করেন মধ্যনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য সাজেদা আহমেদ।
এ রিটের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের মূল নকশা অপরিবর্তিত রেখে তা থেকে ওই দুটি ছবি সাত দিনের মধ্যে অপসারণের জন্য মধ্যনগর ও ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে নির্দেশ দেন। বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলী দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। গত রোববার উচ্চ আদালত থেকে এ আদেশের কপি ইউএনওদের কার্যালয়ে এসে পৌঁছায়। আজ ওই দুই ছবি অপসারণ করা হলো।
বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল থেকে এই দুটি ছবি অপসারণের সময় উপস্থিত ছিলেন মধ্যনগরের ইউএনও নাহিদ হাসান খান, ধর্মপাশার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও অলিদুজ্জামান, ধর্মপাশা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আলী ফরিদ আহমেদ, এলজিইডির ধর্মপাশা উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহাবউদ্দিন, মধ্যনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহিদুল হক, উপপরিদর্শক আবদুস সবুর, ওমর ফারুক, মশিউর রহমান প্রমুখ।
এলজিইডির ধর্মপাশা উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নবগঠিত মধ্যনগর উপজেলার প্রশাসনিক ভবনের প্রস্তাবিত এলাকায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণের জন্য গত অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি থেকে ৯ লাখ ৯৯ হাজার ৭২৪ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ম্যুরালের নকশায় একপাশে বঙ্গবন্ধুর ছবি এবং উল্টো পাশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি রয়েছে। কোটেশনের মাধ্যমে কাজটি পায় ধর্মপাশার মেসার্স রানা ট্রেডার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তৎকালীন ধর্মপাশা উপজেলা প্রকৌশলী মো. আরিফ উল্লাহ খান ৩০ দিনের মধ্যে এ ম্যুরাল নির্মাণকাজ শেষ করার সময় বেঁধে দিয়ে গত বছরের ২৩ জুন ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেন। ওই ম্যুরালের নকশায় এক পাশে বঙ্গবন্ধু ও আরেক পাশে কেবল শেখ হাসিনার ছবি থাকার কথা। কিন্তু সেখানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কোনো রকম অনুমতি ছাড়াই সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ছবি যুক্ত করা হয়।
মেসার্স রানা ট্রেডার্সের ঠিকাদার মো. ইজাজুর রহমান ওরফে রানা বলেন, ‘আমি এখন ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছি। উচ্চ আদালতের আদেশের কপি আমি পাইনি। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল থেকে ছবি অপসারণ করার খবরটিও আমি জানি না।’
মধ্যনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সাজেদা আহমেদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল থেকে সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানের ছবি অপসারণ করায় আমরা উচ্চ আদালত ও উপজেলা প্রশাসনের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ। বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের নকশা পরিবর্তন করে যাঁরা বিধিবহির্ভূতভাবে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবির সঙ্গে সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানের ছবি যুক্ত করেছিলেন, আমরা তাঁদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
মধ্যনগরের ইউএনও নাহিদ হাসান খান ও ধর্মপাশার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও অলিদুজ্জামান বলেন, উচ্চ আদালত থেকে আসা আদেশপত্রটি পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে এটি কার্যকর করার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই একজন শ্রমিক নিয়োজিত করে মধ্যনগরে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল থেকে আজ বেলা আড়াইটার দিকে ছবি দুটি অপসারণ করার কাজ শুরু করা হয়। বিকেলেই ছবিগুলো অপসারণের কাজ শেষ হয়।