ছিলেন আশ্রয়কেন্দ্রে, আগুনে পুড়ল দরিদ্র দুই ভাইয়ের বসতঘর
বসতঘরের ভেতরে-বাইরে চারদিকেই বন্যার পানি। বাধ্য হয়ে দুই ভাই, মা ও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে গিয়েছিলেন পাশের এলাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে। এরই মধ্যে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগে বসতঘরে। পুরো ঘরটি অল্প সময়ের মধ্যেই পুড়ে যায়। গভীর রাতের ঘটনা হওয়ায় আশপাশের কেউই এগিয়ে আসতে সাহস পাননি। এমন পরিস্থিতিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে কোথায় যাবেন, কোথায় থাকবেন—এ নিয়ে দুশ্চিন্তা ও হতাশায় ভুগছেন নোয়াখালী সদর উপজেলার এওবালিয়া ইউনিয়নের চাড়ুবানু গ্রামের দুই ভাই মনিরুজ্জামান ও মনির হোসেন। উপায় না পেয়ে মসজিদে মসজিদে গিয়ে হাত পাতছেন মুসল্লিদের কাছে।
গত সোমবার সন্ধ্যায় জেলা শহর মাইজদীর ফ্ল্যাট রোডের মসজিদে ফটকে আগুনে পুড়ে যাওয়া বসতঘরের কয়েকটি ছবি নিয়ে দাঁড়িয়েছেন এক যুবক। ছবি দেখিয়ে মুসল্লিদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছিলেন তিনি। পরে ঘটনার বিস্তারিত জানতে চাইলে মনিরুজ্জামান বলেন, তিনি ও তাঁর আরেক ভাই মনির হোসেন বৃদ্ধা মা ও স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে একই ঘরে থাকতেন। গত মাসের ভয়াবহ বন্যার পানিতে ডুবে যায় তাঁদের বাড়ি। পানি ঢোকে বসতঘরেও। প্রায় হাঁটুসমান পানি। বাধ্য হয়ে ২৫ আগস্ট গিয়ে ওঠেন পাশের গ্রামের মমিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে।
মনিরুজ্জামান জানান, আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সময় ঘর থেকে সামান্য কাপড়চোপড় ছাড়া আর কিছুই নিয়ে যাননি। সবই ঘরে রেখে গেছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পরের দিন (২৬ আগস্ট) দিবাগত রাত আনুমানিক ১টা ৪০ মিনিটে বাড়িতে বসতঘরে বিদ্যুতের লাইন থেকে আগুন ধরে। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে তাঁরা ছুটে আসেন। বিদ্যুতের আগুন হওয়ায় কেউ নেভানোর সাহস পাননি। আগুনের হাত থেকে কিছুই রক্ষা করতে পারেননি। ঘরে থাকা দুই ভাইয়ের পরিবারের ব্যবহৃত আসবাব, কাপড়চোপড়—সবকিছুই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
মনিরুজ্জামান জানান, তিনি পেশায় রেস্টুরেন্টের ওয়েটার। পরিবারে মা ছাড়াও রয়েছে তাঁর এক ছেলে ও স্ত্রী। অন্যদিকে তাঁর বড় ভাই মনির হোসেন একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় সামান্য বেতনে চাকরি করেন। তাঁর পরিবারে আছে স্ত্রী ও দুই সন্তান। উপায় না পেয়ে তাঁদের নিয়ে এখন আত্মীয়ের বাড়িতে থাকছেন। তিনি জানান, চাকরির টাকায় দুই ভাই সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তার ওপর এখন আয়রোজগারও কমে গেছে। জিনিসপত্রের দাম নাগালের বাইরে। এমন অবস্থায় নিজদের ভিটায় যে নতুন করে ঘর তৈরি করবেন, সেই সাধ্য নেই। তাই বাধ্য হয়ে মসজিদে মসজিদে গিয়ে মুসল্লিদের কাছে সহযোগিতা প্রার্থনা করছেন। কিন্তু তেমন সাড়া পাচ্ছেন না। তাই মা ও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোথায় যাবেন ভেবে কূল পাচ্ছেন না।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বন্যার সময় বিদ্যুতের আগুনে বসতঘর পুড়ে যাওয়ার বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের মাধ্যমে একটি সাহায্যের আবেদন করেছে। আবেদনটি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে কোনো বরাদ্দ পাওয়া গেলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে জানানো হবে। তবে এখন পর্যন্ত বন্যার্তদের জন্য সরকারি বরাদ্দ একেবারেই অপ্রতুল বলে উল্লেখ করেন এই কর্মকর্তা।