কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনকে অনুমতি না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, নবীনবরণ অনুষ্ঠানে র্যাগিংয়ের মতো ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। উচ্চ আদালতও র্যাগিং হতে পারে, এমন অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলার নির্দেশনা দিয়েছেন। র্যাগিংয়ের শঙ্কায় অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হয়েছে। ওই দিন নিজস্ব আয়োজনে নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেয় নিজ নিজ বিভাগ। অন্যদিকে প্রতিবছর ক্যাম্পাসে নবীন শিক্ষার্থীদের আগমনের পর তাঁদের আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নেয় বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। কিন্তু প্রশাসন স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠনের আয়োজনে নবীনবরণ অনুষ্ঠানের অনুমতি দিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি আলোচিত এক নবীন শিক্ষার্থীকে র্যাগিংয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র পাঁচ ছাত্রীকে স্থায়ী বহিষ্কারের পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। র্যাগিং নিয়ে তাঁরা শক্ত অবস্থানে আছেন বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা করছে, নবীনদের নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে র্যাগিংয়ের মতো ঘটনা ঘটে।
নবীনবরণ অনুষ্ঠানের অনুমতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবু তালহা বলেন, কখনো নজির নেই, এসব অনুষ্ঠানে এসে কেউ র্যাগিংয়ের শিকার হয়েছেন। বরং সামাজিক-স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তচিন্তার কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।
জুম্ম ছাত্র কল্যাণ সমিতির সভাপতি মিলন জ্যোতি চাকমা বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ভর্তি হওয়ার পর অনেকগুলো সামাজিক সংগঠনে যুক্ত হয়েছি। কিন্তু কোনো সংগঠনে আজ পর্যন্ত র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেছে বলে শুনিনি। বরং সংগঠনগুলোতে নবীনদের ভালোভাবে বরণ করা হয় এবং সবার সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করা হয়। একে অপরের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ানোর একটা প্ল্যাটফর্ম গড়ে ওঠে।’
ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর জোটবদ্ধ সংগঠন ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মঞ্চ’ (ঐক্যমঞ্চ)। মঞ্চের আহ্বায়ক ইয়াসিরুল কবির বলেন, র্যাগিংমতো অপসংস্কৃতি বন্ধের নামে সংগঠনগুলোকে নবীনবরণ অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। সামাজিক সংগঠনগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা মানে অপসংস্কৃতি চর্চাকারীদের সুযোগ দেওয়া। এতে আরও জনসচেতনতা কমবে এবং সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা বাধাগ্রস্ত হবে। দ্রুত এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
তবে নবীনবরণ নামে কোনো অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক শেলীনা নাসরিন। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে যে প্রোগ্রামের অনুমোদনের জন্য এসেছে, আমি দিয়ে দিয়েছি। প্রক্টর অফিস থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞা আছে কি না, আমার জানা নেই।’
প্রক্টর অধ্যাপক শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, ‘হাইকোর্টের একটি নির্দেশনা আছে, র্যাগিং হতে পারে, এমন অনুষ্ঠান যেন এড়িয়ে চলা হয়। নবীনদের যেখানে জমায়েত করা হয়, সেখানে র্যাগিংয়ের আশঙ্কা থাকে। তাই নবীনবরণ অনুষ্ঠানের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। কর্মশালা বা এ–জাতীয় সব প্রোগ্রামের অনুমতি আমরা দিচ্ছি। ক্যাম্পাসে দিনে ও রাতে সার্বক্ষণিকভাবে শিক্ষার্থীরা নিরাপদে ও নিরাপত্তার মধ্যে থাকুক, সেটাই আমরা চাই।’