চট্টগ্রামে গান গেয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলা তরুণকে ছিনতাইকারী বলে সন্দেহ করেছিলেন নির্যাতনকারী যুবকেরা। শাহাদাত হোসেন নামের ওই যুবককে হত্যার সময় উল্লাসে মেতে উঠতে দেখা যায় হামলাকারী যুবকদের। ওই যুবককে পেটানোর সময় হামলাকারীদের একজন আশপাশের পথচারীদের ডেকে বলছিল, ‘ভাইয়া, সবাই একটা সেলফি তুলে চলে যান।’ ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর আজ বুধবার দুপুরে নগর পুলিশের কার্যালয়ের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ এ তথ্য জানায়।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন ফরহাদ আহমেদ চৌধুরী (৪২), আনিসুর রহমান (১৯) এবং ১৬ বছরের এক কিশোর। গতকাল মঙ্গলবার রাতে নগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে পাঁচলাইশ থানার পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আসামিরা ‘চট্টগ্রাম ছাত্র–জনতা ট্রাফিক গ্রুপ’ নামের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সদস্য। গ্রেপ্তার ফরহাদ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপটির অ্যাডমিন। তবে আন্দোলনকারী মূল ধারার ছাত্র–জনতার সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। ফরহাদ নিজে গ্রুপটি খোলেন।
গত ১৩ আগস্ট নগরের পাঁচলাইশ ২ নম্বর গেট এলাকায় ছিনতাইকারী সন্দেহে শাহাদাত হোসেনকে ট্রাফিক পুলিশ বক্সের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পেটানোর সময় উল্লাস করতে থাকা গ্রেপ্তার কিশোর আশপাশে থাকা লোকজনকে সেলফি তুলতে বলে। পরে তাঁর লাশ নগরের প্রবর্তক মোড় এলাকায় ফেলে আসা হয় ঘটনা ধামাচাপা দিতে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্র জানায়, ঘটনার দিন ‘ছিনতাইকারী’, ‘ধর ধর’, বলে চিৎকার করে ধাওয়া দিয়ে শাহাদাতকে ধরা হয়। শাহাদাতের সঙ্গে সাগর নামের তাঁর এক বন্ধুও ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাগর পালিয়ে গেলও ধরা পড়ে যান শাহাদাত। তবে সেদিন অনেক লোকের ভিড়ে কাদের কাছ থেকে তাঁরা ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেছিলেন, তা জানতে পারেনি পুলিশ। শাহাদাতের বিরুদ্ধে নগরের বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের নয়টি মামলা রয়েছে। সাগরও পুলিশের তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারী।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী তারেক আজিজ ও পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান।
জানতে চাইলে ওসি মোহাম্মদ সোলাইমান প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে ফরহাদ ইট–বালুর ব্যবসা করেন। আনিস নগরের একটি কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে পড়েন। গ্রেপ্তার কিশোর এসএসসি পাস করেছে কি না, নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গ্রেপ্তার তিনজনকে আদালতে পাঠানো হচ্ছে বলে জানান ওসি সোলাইমান।
গত শনিবার ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একদল যুবক ‘মধু হই হই আঁরে বিষ খাওয়াইলা’ গানটির সঙ্গে নেচে নেচে উল্লাস করছেন। একই সঙ্গে দুই হাত খুঁটিতে বেঁধে এক যুবককে পেটাচ্ছেন। মার খেয়ে ভুক্তভোগী যুবকের মাথা ঢলে পড়ে এবং একপর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে পড়েন তিনি।
পরদিন পুলিশ শাহাদাতের স্ত্রী শারমিন আক্তার ও পরিবারের সদস্যদের ভিডিওটি দেখিয়ে নিশ্চিত হন, গান গেয়ে মারধরের শিকার যুবক শাহাদাত। ঘটনাটি ঘটে গত ১৩ আগস্ট। ওই সময় থানা প্রায় পুলিশশূন্য ছিল।
নিহত শাহাদাত নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি থানার পাঁচবাড়িয়া ইউনিয়নের নদনা গ্রামের মিয়াজান ভুঁইয়াবাড়ির মোহাম্মদ হারুনের ছেলে। তবে পরিবার নিয়ে শাহাদাত নগরের কোতোয়ালি থানার বিআরটিসি এলাকার ব্রয়লার কলোনিতে থাকতেন। গত ১৪ আগস্ট নগরের প্রবর্তক মোড়ের পাশের একটি বেসরকারি হাসপাতালের সামনে থেকে পুলিশ শাহাদাতের মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ১৫ আগস্ট ভুক্তভোগী শাহাদাতের বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
এতে বলা হয়, গত ১৩ আগস্ট বেলা দুইটার দিকে কাজের জন্য বাসা থেকে বের হন শাহাদাত। সন্ধ্যার দিকে তাঁর স্ত্রী শারমিন ফোন করলে তিনি জানান, কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় যাবেন। রাত বেশি হওয়ার পরও শাহাদাত বাসায় না ফেরায় তাঁকে ফোন করেন শারমিন। কিন্তু তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এর পরদিন শাহাদাতের বাবা রাত নয়টার দিকে জানতে পারেন, নগরের প্রবর্তক মোড়ের অদূরে বদনা শাহ মিয়া (রহ.) মাজারের বিপরীতে সড়কের পাশে তাঁর ছেলের মরদেহ পড়ে আছে।