একই রশিতে ঝুলছিল মা ও ছেলের লাশ
কুমিল্লার হোমনা পৌরসভার ফকিরপাড়া জজ মিয়ার বাড়ির একটি বসতঘরের বৈদ্যুতিক পাখার সঙ্গে একই রশিতে ঝুলে থাকা মা ও ছেলের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় লাশ দুটি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই গৃহবধূর স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে থানায় আনা হয়েছে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন হোমনা পৌরসভার ফকিরপাড়ার মো. বাবুর স্ত্রী সানজিদা আক্তার (২০) ও তাঁর ছেলে আবদুল্লাহ (২)।
পুলিশ জানায়, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় স্থানীয় এক ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এরপর ঘরের বাইর থেকে শাবল দিয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে একই রশিতে ঝুলে থাকা মা ও সন্তানের লাশ উদ্ধার করে। পরে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্যমতে, সানজিদার স্বামী মো. বাবু হোমনা চৌরাস্তার মোড়ে আসবাব তৈরির দোকানে কাজ করেন। শ্বশুর জজ মিয়া নসিমনচালক ও শাশুড়ি গৃহিণী। ঘটনার সময় ঘরে কেউ ছিলেন না। স্বামী ও শ্বশুর কাজে চলে যাওয়ার পরেই এই ঘটনা ঘটে।
সানজিদার বাবা রনি মিয়া জানান, ‘তিন বছর আগে মো. বাবু ও সানজিদার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর আবদুল্লাহর জন্ম হয়। এক বছর ধরে তাঁদের মধ্যে মুঠোফোন ব্যবহার করা নিয়ে কলহ দেখা দেয়। এ নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া হতো। এর বাইরে আর কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। কিন্তু কী কারণে আমার মেয়ে নাতি কে নিয়ে একই রশিতে ঝুলে আত্মহত্যা করল, এটা বের করতে হবে।’
স্বামী মো. বাবু বলেন, ‘রাতে আমরা একসঙ্গে ছিলাম। কোন ধরনের ঝামেলা হয়নি। সকালে প্রতিদিনের মতো একসঙ্গেই ঘুম থেকে উঠি। আমি কাজে যাওয়ার আগে সে (সানজিদা) অন্য এক বাড়িতে গিয়েছিল। তখন তাকে নিজের ঘরে যাওয়ার কথা বলে কাজে চলে যাই। পরে শুনি, সে ফাঁসি দিয়ে আমার ছেলেকে নিয়ে আত্মহত্যা করেছে।’
শাশুড়ি রাফেজা খাতুন বলেন, ‘সকালে চাচাশ্বশুরের বাড়ি থেকে দুধ এনে বাড়ির প্রধান ফটক বন্ধ দেখতে পাই। পরে অন্যজনের বাড়ির ওপর দিয়ে নিজের বাড়িতে গিয়ে দেখি ভেতর থেকে ঘরের দরজা আটকানো। ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে জানালার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিয়ে বউ ও নাতিকে ফ্যানের সঙ্গে ফাঁসি দিয়ে ঝুলে থাকতে দেখি। পরে প্রতিবেশীরা আসেন। এরপর পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।’
এ ব্যাপারে হোমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় বাড়ি থেকে ঘরের দরজা ভেঙে ফ্যানের সঙ্গে একই রশিতে ঝুলে থাকা মা ও সন্তানের লাশ দুটি উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, পারিবারিক কলহের কারণেই এই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে থানায় আনা হয়েছে।