যশোরে উত্তেজনার মধ্যে শ্রমিক লীগের দুই পক্ষের সম্মেলন, পাল্টাপাল্টি কমিটি
টান টান উত্তেজনার মধ্য দিয়ে যশোর জেলা শ্রমিক লীগের দুই পক্ষ আলাদাভাবে ত্রিবার্ষিক সম্মেলন করেছে। আজ শনিবার বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের অনুসারীরা জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এবং যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারীরা পৌর কমিউনিটি সেন্টারে সম্মেলনের আয়োজন করেন। এতে দুই পক্ষই পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষণা করে।
সম্মেলনে শাহীন অনুসারীদের সভাপতি হন আজিজুল আলম (মিন্টু) ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ লিটন এবং নাবিল অনুসারীদের সভাপতি হয়েছেন জবেদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন। দুটি সম্মেলনেই জেলার দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থান থেকে নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে অংশ নেন। দুই পক্ষের পৃথক মিছিলে শহরে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। দুটি সম্মেলনেই নেতা-কর্মীরা একে অপরকে হুমকি দিয়ে বক্তব্য দেন।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগ দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার ও অন্য অংশের নেতৃত্বে সদরের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। জেলা আওয়ামী লীগের বিভক্তির কারণে জেলা শ্রমিক লীগও দুটি ধারায় বিভক্ত। সেই ধারাবাহিকতায় সম্মেলনকে ঘিরে শ্রমিক লীগের দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়েছে।
আজ বিকেলে শাহীন–সমর্থিত পক্ষের সম্মেলন হয় জেলা পরিষদ মিলনায়তনে। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কে এম আযম খসরু। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। অনুষ্ঠানে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনের দ্বিতীয় অংশে কাউন্সিলরদের মৌখিক সমর্থনে আজিজুল আলমকে সভাপতি ও সৈয়দ লিটনকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন কে এম আযম খসরু।
সম্মেলনে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কে এম আযম খসরু বলেন, ‘শ্রমিক লীগে কিছু পরগাছা ভর করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যশোর জেলা শ্রমিক লীগের সম্মেলন হয় না দীর্ঘদিন ধরে। কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি-সম্পাদকের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সম্মেলনের আয়োজন করতে বলি। এ সম্মেলন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি-সম্পাদকের নির্দেশে হচ্ছে। এখানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদক আছেন। কেন্দ্রীয় কমিটিকে চ্যালেঞ্জ করে যশোরে একটি পক্ষের নেতা জবেদ আলী ও নাছির উদ্দিন পাল্টা সম্মেলনের আয়োজন করেছে। এই জবেদ আলী ও নাছির উদ্দিন দলের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন। তাঁদের আমরা চিরদিনের জন্য শ্রমিক লীগ থেকে বহিষ্কার করলাম। তাঁদের কমিটি বৈধতা পাবে না। ওই অনুষ্ঠানে যেসব কেন্দ্রীয় নেতা এসেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নাবিল অনুসারীদের পাল্টা সম্মেলন
অন্যদিকে কোনোরকম প্রচার-প্রচারণা ছাড়াই গত শুক্রবার রাতে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নাবিল আহমেদের অনুসারীরা পাল্টা সম্মেলনের আয়োজন করেন। আজ বিকেলে স্থানীয় পৌর কমিউনিটি সেন্টারে এ পক্ষের সম্মেলন হয়। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি তোফায়েল আহমেদ। প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হায়দার গনি খান পলাশ। সম্মেলনের উদ্বোধক ছিলেন শ্রমিক লীগের সহসভাপতি এস এম কামরুজ্জামান। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে নাবিলের অনুসারী জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অধিবেশনে উপস্থিত সংগঠনের কাউন্সিলরের মতামতের ভিত্তিতে জবেদ আলীকে সভাপতি ও নাছির উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি তোফায়েল আহমেদ। তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘একটি পকেট কমিটি করার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক যশোরে এসেছেন। তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে আলোচনা না করে এই সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেছেন।’
কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদককে তিরস্কার করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘এই সম্মেলনে যে নেতা নির্বাচিত হবেন, কেন্দ্রীয় কমিটির ২৩ নেতার সমর্থন পাবেন। ফলে আপনাদের কমিটি বৈধতা পাবে। অন্য পাশে কে কাকে নেতা নির্বাচিত করল, সেটা দেখার বিষয় না। পকেট ভারী করে কমিটি দেওয়ার আয়োজনের নামে সম্মেলন নেতা-কর্মীরা কখনোই মেনে নেবেন না।’