ঠুস করে অন্তর্বর্তী সরকারের গদি লড়ে যাবে: নেত্রকোনায় নুরুল হক

নেত্রকোনায় তারুণ্যের সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। শনিবার সন্ধ্যায় শহরের মোক্তারপাড়া মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, ‘দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে না থাকলে, জনগণের আস্থাভাজন সরকার না হলে ঠুস করে অন্তর্বর্তী সরকারের গদি লড়ে যাবে। আপনারা এক-এগারোর পথে হাঁটবেন না। ওয়ান-ইলেভেনের সরকার যেভাবে লেজেগোবরে পাকিয়ে ফেলেছিল, আপনারা তা করবেন না। এখনো চাঁদাবাজি চলছে, চাঁদাবাজি বন্ধ হয় নাই। শুধু চাঁদাবাজির হাতবদল হয়েছে। নৌপথ, সড়কপথ ধরে সব জায়গায় চাঁদাবাজি, দখলবাজি চলছে। এসব কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজন হলে সেনাবাহিনী নামিয়ে চাঁদাবাজি বন্ধ করে দিতে হবে। দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। তাই জনগণ যদি খেপে যায়, তবে গদি নড়বড়ে করে দেবে। এখনো ঢালাওভাবে একের পর এক মামলা দেওয়া হচ্ছে। যাঁরা ঘটনায় জড়িত নন, তাঁদের এভাবে ঢালাও মামলা দিয়ে হয়রানি বন্ধ করতে হবে।’

আজ শনিবার সন্ধ্যায় নেত্রকোনা মোক্তারপাড়া মাঠে তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নুরুল হক এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ছাত্র, যুব ও পেশাজীবী অধিকার পরিষদ এ সমাবেশের আয়োজন করে।

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে নুরুল হক বলেন, ‘আপনাদের নেত্রী শেখ হাসিনা জুতা পরার সময় পান নাই। তিনি পালিয়ে গেছেন। এখন আওয়ামী লীগ মৃত লাশ হয়েছে। সুতরাং আপনারা আর আস্ফালন করবেন না। করেও কোনো লাভ নেই। আর আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে যারা চেষ্টা করবে, ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে তাদের সমুচিত জবাব দিতে হবে। এই গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের কোনো জায়গা নেই। আওয়ামী লীগের দোসর যাঁরা ছিলেন, তাঁদের কোনো জায়গা হবে না। আওয়ামী লীগের যাঁরা আছেন, তাঁদের দুধ দিয়ে গোসল করে পরিশুদ্ধ হতে হবে। কারণ, গণ-অভ্যুত্থানে যাঁরা শহীদ ও আহত হয়েছেন, তাঁদের পরিবারের আহাজারি এখনো থামেনি।’

নেত্রকোনায় তারুণ্যের সমাবেশে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন দিতে ও সংসদের মেয়াদ আমেরিকার মতো চার বছর করার প্রস্তাব তুলে ধরেন নুরুল হক নুর। শনিবার সন্ধ্যায় শহরের মোক্তারপাড়া মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক আরও বলেন, ‘আমরা ছাত্রদের নিয়ে, তরুণদের নিয়ে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাই। গণ অধিকার পরিষদ কারও জায়গা দখল করে না, কোনো চাঁদাবাজি করে না। সুতরাং গণ অধিকার পরিষদের পতাকাতলে আপনারা যোগ দেবেন। গণ অধিকার পরিষদের প্রতীক ট্রাক। নির্বাচন হলে এই প্রতীকে আপনারা ভোট দেবেন। আর আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন দিতে। সংসদের মেয়াদ আমেরিকার মতো চার বছর করতে।’

গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে পরিবর্তন এসেছে, সেই পরিবর্তনকে স্থায়ী করতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে গণ অধিকার পরিষদ সময় দেবে। অল্প সময়ে একটি সরকারকে বোঝা যায় না। মাত্র তিন মাস হয়েছে এই সরকারের। আমরা এই সরকারকে আরও সময় দিতে চাই। তবে সরকার যত দ্রুত সম্ভব সবকিছু সংস্কার করে নির্বাচন দিলে ভালো। শিক্ষাব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দিন। প্রয়োজন হলে বেতন বৃদ্ধি করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভালো ভালো শিক্ষক নিয়োগ করুন।’

তারুণ্যের এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গণ অধিকার পরিষদের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন। নুরুল হক ছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।

সভাপতির বক্তব্যে হাসান আল মামুন বলেন, ‘আমার নিজ জেলা নেত্রকোনায় শেখ হাসিনার নামে যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টি হয়েছে, তার নাম পরিবর্তন করে নেত্রকোনার কৃতী সন্তান হুমায়ূন আহমেদের নামে করার দাবি জানাচ্ছি।’