কয়রায় জমি থেকে মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণ, ক্ষতিপূরণের দাবি
খুলনার কয়রায় ব্যক্তিমালিকানার জমি অধিগ্রহণ না করে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এ জন্য ক্ষতিপূরণের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন জমির মালিকেরা। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার সুন্দরবনসংলগ্ন শাকবাড়িয়া নদী তীরবর্তী হরিহরপুর গ্রামের বাঁধে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘পুনর্বাসন’ প্রকল্পের আওতায় কয়রার কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদী তীরবর্তী প্রায় ৩২ কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। ১ হাজার ১৭২ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে এ বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে সাতটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। বাঁধ নির্মাণকাজের জন্য অনুমতি ছাড়াই বাঁধের পাশের রেকর্ডিও জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় জমিমালিকেরা মাটি কাটতে বাধা দেন। পরে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছেন ঠিকাদাররা। তবে আস্থা রাখতে পারছেন না জমিমালিকেরা।
আজ সকাল ১০টায় মানববন্ধন শুরু হয়। কর্মসূচিতে উপস্থিত এলাকার কয়েকজন জানান, ঠিকাদারের লোকজন প্রথমে ভয় দেখিয়ে জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়ে জমি থেকে অপরিকল্পিতভাবে এক্সকাভেটর যন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে নিচ্ছিলেন। তাঁরা ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি থেকে যেভাবে মাটি কেটে নিচ্ছেন, তাতে আগামী ১০ বছরেও ফসল ফলানো সম্ভব হবে না।
হরিহরপুর গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জিতেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরুর আগে পাউবো কর্মকর্তারা ও ঠিকাদারের লোকজন জানিয়েছিলেন নদীর চর থেকে মাটি কেটে আনা হবে। সেখানে লাল পতাকা টানিয়ে চরের বনায়নের গাছও কেটে ফেলা হয়। কিন্তু পরে তাঁরা বাঁধের ভেতরে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি থেকে মাটি কাটা শুরু করেন। দুই পাশের অব্যাহত নদী ভাঙনের ফলে এলাকার মানুষের অনেক জমি নদীতে চলে গেছে। এখন যেটুকু জমি আছে, সেখান থেকে এভাবে মাটি কেটে নিলে মানুষের অপূরণীয় ক্ষতি হবে।
ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক সবিতা রানী সরকার বলেন, ‘বাঁধের পাশে আমার চার বিঘা জমি রয়েছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড জমি অধিগ্রহণ না করেই বাঁধ নির্মাণ করছে। আমার জমি থেকে জোর করে মাটি কেটে নিয়েছে। বাধা দিলে মামলা দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি।’
রেনুকা রানী মণ্ডল নামের আরেক নারী বলেন, ‘মাটি কাটার সময় বাড়ির গাছপালা তো কাটছেই; এরপর দেখছি কারেন্টের খুঁটিগুলোও সরিয়ে এনে বাড়ির মধ্যে দিয়ে পুতে দিচ্ছে।’
জানতে চাইলে বাঁধ নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমিন অ্যান্ড কোম্পানির পক্ষে কাজের তত্ত্বাবধায়ক আমিনুল ইসলাম বলেন, বাঁধের পার্শ্ববর্তী নদীর চরে পর্যাপ্ত মাটি না থাকায় ভেতরের জমি থেকে মাটি নেওয়া হচ্ছে। এতে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তাঁদের বিষয়ে পাউবো কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ক্ষতিপূরণের বিষয়টি তাঁরাই দেখবেন। আর আপাতত বিদ্যুতের খুঁটি সরানোর প্রয়োজন নেই।
পাউবো সাতক্ষীরা-২ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিকুর রহমান বলেন, জমিমালিকদের ক্ষতিপূরণের দাবির বিষয়টি প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সামনে বর্ষা মৌসুম। এ সময় কাজ বন্ধ রাখা যাবে না। এ জন্য জমি মালিকদের বুঝিয়ে নির্মাণকাজ চালু রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।