নেত্রকোনায় গৃহবধূ ও মেয়ের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা
নেত্রকোনার পূর্বধলায় নিজ বাড়ি থেকে গৃহবধূ রূপালী আক্তার (২৭) ও তাঁর সাত বছরের মেয়ে রুবাইয়া তাবাসসুমের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রূপালীর বাবা আবদুর রশিদ বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলাটি করেন। এতে রূপালীর স্বামী মোস্তাকিমসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়। তাঁকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ বৃহস্পতিবার আদালতে সোপর্দ করা হবে।
এর আগে গত মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার ধলামূলগাঁও ইউনিয়নের চুরাটিয়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করে পুলিশ। এ মামলায় গ্রেপ্তার রূপালীর স্বামী মোস্তাকিম ময়মনসিংহে ফায়ার সার্ভিসের বিভাগীয় কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন।
মামলার বাদী আবদুর রশিদ এজাহারে উল্লেখ করেন, বিয়ের পর থেকে মোস্তাকিম ও তাঁর পরিবারের লোকজন যৌতুকের জন্য রূপালীকে মারধর করতেন। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার সালিস হয়। মেয়ের কষ্ট সইতে না পেরে দুই বছর আগে তিনি গরু বিক্রি করে মোস্তাকিমকে যৌতুক হিসেবে তিন লাখ টাকা দেন। এরপর আরও তিন লাখ টাকা দাবি করে মোস্তাকিমের পরিবার। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় দুই সপ্তাহ আগে রূপালীকে মারধর করে বাবার বাড়িতে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। দুই দিন পর মেয়েকে আবার স্বামীর বাড়িতে বুঝিয়ে-শুনিয়ে রেখে যান তিনি। চাহিদামতো তিন লাখ টাকা দিতে না পারায় মোস্তাকিম ও তাঁর পরিবারের লোকজন পরিকল্পিতভাবে রূপালীর হাত-পা বেঁধে বিদ্যুতায়িত করে তাঁকে হত্যা করেছেন। রূপালীর বড় মেয়ে রুবাইয়া এ ঘটনা দেখে ফেলায় তাকেও হত্যা করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আবদুর রশিদ আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এটা নিশ্চিত যে আমার মেয়ে ও নাতি রুবাইয়াকে মোস্তাকিম ও তাঁর পরিবারের লোকজন মিলে হত্যা করেছেন। এখন তাঁরা বলছেন, বিদ্যুতের কেব্ল এনে খাটের পাশে ফোন চার্জ দিচ্ছিলেন, তা থেকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছে রূপালী ও রুবাইয়া। যদি বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মৃত্যু হতো, তবে ছোট মেয়েটা কীভাবে বেঁচে রইল?’
এদিকে পুলিশের হাতে আটক হওয়ার আগে মোস্তাকিম প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘বিদ্যুৎস্পৃষ্টে আমার স্ত্রী-মেয়ে মারা গেছে। ছোট মেয়ে মনে হয়, একটু দূরে ছিল। ফলে সে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়নি।’
ঘটনার প্রসঙ্গে রূপালীর শাশুড়ি আমেনা খাতুন জানিয়েছিলেন, মঙ্গলবার সকাল সাতটার দিকে তিনি ঘুম থেকে উঠে রূপালী ও তার মেয়েদের দেখতে না পেয়ে তাদের ডাকতে যান। গিয়ে দেখেন, রূপালী ও তার বড় মেয়ে খাটে মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। তাদের পাশে ছোট মেয়ে জীবিত আছে।
ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর তাঁদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে জানান পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রিয়াদ মাহমুদ। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে রূপালীর ডান হাতে আগুনের পোড়া দাগ, দুই পায়ের গোড়ালির ওপরে ও দুই হাতের কবজির ওপরে কালো দাগ দেখা যায়। তাঁর মেয়ের শরীরেও একই ধরনের দাগ পাওয়া গেছে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।