গাজীপুরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কাজে ফিরেছেন শ্রমিকেরা, শিল্পকারখানায় স্বস্তি

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকায় একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিকেরা। আজ বুধবার সকালেছবি: প্রথম আলো

বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভে অস্থির হয়ে ওঠা গাজীপুরের শিল্পকারখানাগুলোতে স্বস্তি ফিরেছে। কয়েক দিন ধরে কোনো কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের খবর পাওয়া যায়নি। আজ বুধবার সকালেও শ্রমিকেরা শান্তিপূর্ণভাবে কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে শ্রমিক আন্দোলনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া চারটি কারখানা এখনো চালু হয়নি।

কারখানা শ্রমিক ও শিল্প পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্তর্বতী সরকার গঠনের কিছুদিন পর থেকেই গাজীপুরসহ আশপাশের কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা যায়। কোনো কারখানায় বকেয়া বেতনের দাবিতে, আবার কোনোটিতে হাজিরা বোনাস ও টিফিন বিল বৃদ্ধি করার দাবিতে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকেরা। এমনকি শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ ও শ্রমিক নিয়োগের দাবিতেও আন্দোলন করেন শ্রমিকেরা। অনেক কারখানার শ্রমিকেরা ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় এসব মহাসড়কে চলাচলকারীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।

সর্বশেষ ১২ অক্টোবর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সারাবো এলাকায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের প্রায় ২২ হাজার শ্রমিক কাজ বন্ধ করে গত সেপ্টেম্বর মাসের বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এ সময় শ্রমিকেরা চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন। প্রায় দুই দিন ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকার পর শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতায় শ্রমিকেরা বেতন পেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

আরও পড়ুন

কারখানার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা জানান, দুর্গাপূজার ছুটি শেষে ১৩ অক্টোবর থেকে শ্রমিকেরা আবার কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেন। এর পর থেকে আর কোনো শিল্পকারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের খবর পাওয়া যায়নি। তবে শ্রমিক আন্দোলনের সময় জেলায় বেশ কয়েকটি কারখানায় কর্তৃপক্ষ শ্রম আইন অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। পর্যায়ক্রমে অনেকগুলো কারখানা চালু হলেও এখন পর্যন্ত চারটি কারখানা বন্ধ রয়েছে।

আজ সকালে গাজীপুরের ভোগড়া এলাকার টিঅ্যান্ডজেড অ্যাপারেলস কারখানার শ্রমিক কবির হোসেন বলেন, প্রতি মাসেই কারখানা কর্তৃপক্ষ বেতন দিতে গড়িমসি করে। বেতন চাইতে গেলেই ‘আজ নয় কাল দিচ্ছি’ বলে কালক্ষেপণ করে। যে কারণে আন্দোলন ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।

আরও পড়ুন

সম্প্রতি যেসব দাবি নিয়ে শ্রমিকেরা আন্দোলন করেছেন, এগুলো খুব একটা বড় ইস্যু ছিল না বলে মনে করেন জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক জোট বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আশরাফুজ্জামান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শ্রমিকেরা বর্তমানে অসংগঠিত। যার কারণে তাঁদের ওপর কারও নিয়ন্ত্রণ নেই। প্রতিটি কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন থাকলে আলোচনা করে শ্রমিকদের দাবিদাওয়াগুলো সমাধান করা সহজ হতো। এ ক্ষেত্রে আন্দোলন করলেও এক কারখানা থেকে অন্য কারখানায় ছড়িয়ে পড়ত না।’

মো. আশরাফুজ্জামান আরও বলেন, নির্ধারিত সময়ে শ্রমিকদের বেতন–ভাতা পরিশোধ করতে হবে। শ্রম আইন মেনে মালিককে কারখানা চালাতে হবে। মালিক-শ্রমিক উভয়কেই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। রাস্তাঘাট অবরোধ, জ্বালাও–পোড়াও, ভাঙচুর শ্রমিক আন্দোলনের অংশ নয়।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খলিলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গাজীপুরে কোথাও শ্রমিক আন্দোলনের খবর পাওয়া যায়নি। আজ সকালে শান্তিপূর্ণভাবে শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে আন্দোলনের সময় বন্ধ হয়ে যাওয়া চারটি কারখানা এখনো বন্ধ আছে।

আরও পড়ুন