সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনে শিক্ষার্থীদের তালা

আট দফা দাবিতে আন্দোলন করেছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার সকালেছবি: প্রথম আলো

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আট দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছেই। তৃতীয় দিনের মতো ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শিক্ষার্থীদের অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়। বেলা পৌনে ২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কর্মসূচি চলছিল।

কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, রেজিস্ট্রার, জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তরের পরিচালকের পদত্যাগসহ আট দফা দাবিতে তাঁদের কর্মসূচি চলছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।

শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার আগে শিক্ষার্থীরা ভবনটিতে থাকা সবাইকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য ১০ মিনিট সময় বেঁধে দেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনেকে বের হলেও অনেকে সরেননি। পরে শিক্ষার্থীরা তালা মেরে দিলে ভবনের ভেতরে অর্ধশতাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। দুপুর পৌনে ২টা পর্যন্ত তাঁরা তালাবদ্ধ অবস্থায় আছেন।

আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, কে বা কারা হোয়াটসঅ্যাপে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হুমকি দিচ্ছে। এ ছাড়া কিছু শিক্ষকও পরীক্ষায় মার্কস কম দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের ভয় দেখাচ্ছেন। এসব অপতৎপরতা থামাতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তাঁদের কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন। তবে তাঁদের আজও আমরা আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছি।’

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল ও এলাকাবাসীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয় ফটকের সামনে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানিয়ে ছাত্রদলের সাঁটানো ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার ঘটনার জেরে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত। এ সময় ৩০ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থী ছাত্রদল ও বহিরাগত ব্যক্তিদের মারধরের শিকার হন। পরে সেনাসদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

সংঘর্ষের রাতেই কেন্দ্রীয় ছাত্রদল তাৎক্ষণিকভাবে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কমিটিকে মেয়াদোত্তীর্ণ উল্লেখ করে বিলুপ্ত ঘোষণা করে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক এক নেতাকে সংগঠনের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করার পাশাপাশি এই সংঘর্ষের প্রকৃত কারণ উদ্‌ঘাটনে কেন্দ্রীয় কমিটি দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

সংঘর্ষের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মারধরের শিকার শিক্ষার্থীদের ‘ছাত্রলীগ’ ট্যাগ দিয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন। এ ছাড়া গত শনিবার রেজিস্ট্রার এক বিজ্ঞপ্তিতে ব্যানার ও ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলার ঘটনাকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ বলে আখ্যা দেন। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে আট দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন।

গতকাল সোমবার বিকেলে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের আট দফা দাবি নিয়ে উপাচার্য মো. আলিমুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। তাই শিক্ষার্থীরা আবার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।