রাজধানীর বাংলাদেশ সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে লাগা আগুন নেভানোর কাজ করতে গিয়ে ট্রাকচাপায় মারা যাওয়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মী সোহানুর রহমানের (নয়ন) স্বপ্ন ছিল অনেক বড় হওয়ার। তিনি ফায়ার সার্ভিসে চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনা করতেন। কয়েক দিন আগে বাড়িতে গিয়ে ডিগ্রি পরীক্ষা দিয়েছেন। তাঁর সেই স্বপ্ন অকালেই ঝরে গেল।
সোহানুরের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বড়বালা ইউনিয়নের আটপুনিয়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আক্তারুজ্জামান ও নার্গিস বেগম দম্পতির একমাত্র ছেলে। সীমা আখতার নামে তাঁর একটি বড় বোন আছে।
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১টা ৫২ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সচিবালয়ে আগুন লাগার খবর পান। রাত ১টা ৫৪ মিনিটে তাঁরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। প্রায় ১০ ঘণ্টা পর আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নেভানোর কাজ করতে গিয়ে ট্রাকের ধাক্কায় সোহানুর মারা যান।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল ঘটনাস্থলে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, পানির পাম্প থেকে লাইনের সংযোগ দিতে সড়ক পার হওয়ার সময় ট্রাকের ধাক্কায় সোহানুর আহত হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
রংপুর থেকে সোহানুরের গ্রামের বাড়ির দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। আজ দুপুরে বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, আত্মীয়স্বজন বাইরে বসে আছেন। সোহানুরের মা নার্গিস বেগম আহাজারি করতে করতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পরপর বিলাপ করতে করতে বলছেন, ‘মোর বাবাক আনি দেও। মোর তো একটাই বাবা। মোর ছোওয়াটাক আনি দেও। অ্যালা কায় কী করবে? কায় সাংসার দেখবে? হামার স্বপ্ন সোগ ভাঙ্গিচুরি শেষ হয়া গেল।’ গ্রামের নারীরা তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন।
বাড়ির উঠানে চেয়ারে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছেন সোহানুরের বাবা আক্তারুজ্জামান। কেউ গেলে সোহানুরের স্বপ্নের কথা বলছেন। আক্তারুজ্জামান জানান, তাঁর ছেলে ছড়ান ডিগ্রি কলেজে ডিগ্রি পড়তেন। ২০২২ সালের নভেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ফায়ার সার্ভিসে যোগদান করেন। তাঁর লেখাপড়ার করার খুব ইচ্ছা ছিল। স্বপ্ন ছিল অনেক ওপরে যাওয়ার। তিনি বলেন, বিয়ে নিয়ে কথা উঠলেই সোহানুর বলতেন, ‘না আম্মু, দেখি প্রমোশন (পদোন্নতি) হউক, আরও পড়াশোনা করি।’
সোহানুরের প্রতিবেশীরা জানান, ঢাকায় তাঁদের আত্মীয়স্বজন আছেন। দুপুরে ঢাকায় জানাজা শেষে তাঁর মরদেহ নিয়ে তাঁরা বাড়ির দিকে রওনা দেবেন।
প্রতিবেশী আবদুর রাজ্জাক বলেন, সোহানুর গ্রামে এসে গরিব-দুঃখী মানুষের সঙ্গে মিশতেন। গ্রামরে সবাই তাঁকে ভালোবাসতেন। অথচ সেই ছেলেই অকালে মারা গেলেন। সোহানুরের পরিবারের মতো তাঁর প্রতিবেশীরাও ঘটনার তদন্ত করে বিচার দাবি করেন।